ইয়াবা নিয়ে মিয়ানমারের নতুন ছক

ইয়াবা নিয়ে জিরো টলারেন্সে আছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মাদক ব্যবসায়ীরা তাই ‘বাজার’ আর ‘সরবরাহ’ ধরে রাখতে আঁকছেন নিত্যনতুন ছক । যেখান থেকে ইয়াবার চালান আসে, সেই মিয়ানমারের ইয়াবা উৎপাদনকারীরা এবার নিয়েছেন অভিনব এক কৌশল। বাংলাদেশে ইয়াবার বাজার ধরে রাখতে কোন ছক এঁকেছেন তারা? বিস্তারিত জানতে পড়ুন জয়নিউজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

খুচরা বাজারে প্রতিটি ইয়াবা গড়ে বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়। সে হিসেবে গত ৫ বছরে কোটির উপরে উদ্ধার হওয়া ইয়াবার বাজার দর তিনশ কোটি টাকা। আর উদ্ধার না হওয়া ইয়াবার বাজারমূল্যতো কল্পনাতীত।

- Advertisement -

সমস্যা হল, যেসব ব্যক্তির কাছ থেকে এসব ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে তাদের আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে মিলছে না উদ্ধারকৃত ইয়াবার চড়া মূল্যের সমীকরণ।

- Advertisement -google news follower

সম্প্রতি ইয়াবা নিয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স- ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একরকম ‘গর্তে’ ঢুকিয়ে দিয়েছে। ইয়াবার বাজারেও পড়েছে এমন তৎপরতার প্রভাব। কিন্তু নতুন খবর হল, বাংলাদেশের বাজারে ইয়াবার সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে নতুন ছক এঁকেছেন মিয়ানমারের ইয়াবা উৎপাদনকারীরা।

তারা বাকিতে ইয়াবা তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও এ বাণিজ্যে জড়াচ্ছে তারা।

- Advertisement -islamibank

কখনো বাসের হেলপার, কখনো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, কখনোবা ইয়াবা পাচার হচ্ছে খেটে খাওয়া দিনমজুরের মাধ্যমে। এ চক্রের বাইরে নেই বস্তিবাসী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।

এ ধরনের ব্যক্তিরা পুঁজি খাটিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করছেন এমন তথ্য এখনও পর্যন্ত উঠে আসেনি। বরং তাদের দিয়ে ইয়াবাগুলো পাচার করছে মধ্যসত্ত্বভোগীরা এমন তথ্যই জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য প্রতিরোধে নিয়োজিত বাহিনী।

দীর্ঘদিন দশ থেকে বারো টাকায় ইয়াবা কিনে পাইকারী বাজারে নব্বই থেকে একশ’ টাকায় সরবরাহ করতো কারবারীরা। ইয়াবাগুলো আটক হলে বিপুল অঙ্কের টাকার মাশুল গুণতে হত তাদের।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে কয়েক ডজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মৃত্যুর বিষয়টিও এদেশের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চাপে ফেলে দেয়। আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ীদের ট্রানজিট পয়েন্ট টেকনাফেও বড় কয়েকটি চালান আটক হওয়ার পর গা ঢাকা দিতে শুরু করেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।

একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক কারবারীদের অনেকেই দেশ ছেড়েছে গোপনে। যার প্রভাবে ইয়াবা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। এতে বাংলাদেশের ইয়াবার বাজারে পড়ে নেতিবাচক প্রভাব।

জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীদের চাঙা রাখতে আন্তর্জাতিক একটি মাদক চক্র বাংলাদেশের কারবারীদের বাকিতে ইয়াবা দেওয়া শুরু করেছে। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন ভয়ংকর তথ্য। দেশের মাদক বাজার পুনরায় চাঙা করতে মিয়ানমারের মাদক কারখানাগুলো এঁকেছে এই নতুন ছক।

নতুন এই ছকের অংশ হিসেবে টেকনাফের মিঠাপানির ছড়া, লেঙ্গুরবিল, মাঝিরপাড়া এলাকায় অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে ইয়াবা পাচারের কাজে ব্যবহার করছে ওই চক্রটি। বিনাপুঁজিতে কোটিপতি হওয়ার এ আয়োজনে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে তারা।

গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্য জানান, ওই তিন গ্রামের বাসিন্দাদের কেউই মনেই করেন না ইয়াবা একটি অবৈধ মাদক। তারা ইয়াবা সেবনে অভ্যস্থ না হওয়ার ফলে স্বাভাবিক অন্যান্য পণ্যের ব্যবসার মতোই মনে করে। ইতিমধ্যে ওই এলাকাগুলোতে ইয়াবার ভয়ঙ্কররূপ সম্পর্কে সচেতন করতে একটি প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এ ছক বাস্তবায়িত হলে দেশজুড়ে ইয়াবা পাচার ছাড়িয়ে যাবে অতীতের সকল রেকর্ড। কারণ মাত্র ৮৬ কিলোমিটার মিয়ানমার সীমান্ত অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সার্বক্ষণিক সীমান্ত রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকলেও ওই বাহিনীর বিপথগামী গুটিকয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে ইয়াবা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে তাদের ধরা পড়ার নজিরও রয়েছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই পুলিশ সদস্যরাও। সীমান্তে যদি ইয়াবা চালান প্রবেশের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে, অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ‘মানসিকভাবে’চাপে থাকা পুলিশ ইয়াবা পাচার ঠেকাতে কতটা সক্ষম হবে তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা যে ছকই প্রণয়ন করুক না কেন বাংলাদেশের সঙ্গে ৮৬ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবি যদি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পারে, নদী পথ যদি কঠোর নজরদারিতে রাখা যায় তাহলে ইয়াবা পাচার সহজ হবে না। আসন্ন নির্বাচনে পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে মাদক পাচার রোধকে অতীতের মতো ‘ফার্স্ট প্রায়োরিটি’দেওয়ার সুযোগ কিছুটা কমবে। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। সেক্ষেত্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতা আমাদের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমাবে।

বিজিবির টেকনাফ এলাকায় কর্মরত মেজর শরিফুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, বিজিবি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে আছে, থাকবে। নির্বাচনের দায়িত্ব যাদের তারা নির্বাচন নিয়ে থাকবেন, যাদের দায়িত্ব সীমান্তে তারা সীমান্ত নিরাপদ রাখবেন। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।

জয়নিউজ/জুলফিকার
KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM