চট্টগ্রাম ইপিজেডে কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহ (৪৩) খুনের রহস্য উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত আকরাম উল্লাহর প্রেমিকা রোজিনা বেগম ওরফে রোজী আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ বলেন, আকরাম উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেফতার রোজিনা। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
গত ৩ জুলাই কাভার্ডভ্যানচালক আকরাম উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রোজিনাকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি রোজিনা স্বীকার করেন বলে জানান পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা।
রোজিনা বাগেরহাটের শরণখোলা থানা সংলগ্ন খুরিয়াখালী গ্রামের তাফালবাড়ীর কবির মোল্লার স্ত্রী। রোজীর স্বামী কবির মোল্লা সৌদি আরব প্রবাসী। নিহত আকরামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। সেখানে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আকরাম খুনের ঘটনায় তার ছেলে বাদী হয়ে ইপিজেড থানায় হত্যা মামলা করেন।
গত ১ জুলাই রাতে নগরীর ইপিজেড থানাধীন নিউমুরিং এলাকার একটি ভবনের তালাবদ্ধ বাসা থেকে কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাসায় রোজিনার সঙ্গে থাকতেন আকরাম।
পিবিআই বলছে, রোজিনার সঙ্গে ২০১৫ সালে কবির মোল্লার বিয়ে হয়। তাদের সংসারে পাঁচ বছর বয়সী এক কন্যাশিশু রয়েছে। রোজিনা নগরীর ইপিজেডে গার্মেন্টেসে চাকরি করতেন। স্বামী কবির মোল্লার ইপিজেড থানাধীন লেবার কলোনিতে চায়ের দোকান ছিল। ওই দোকানেই আকরামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। করোনা মহামারিতে চাকরি চলে যাওয়ায় স্বামী সন্তান নিয়ে গ্রামে চলে যান রোজিনা। স্বামী কবির মোল্লা গ্রামে কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে সৌদি আরব চলে যান।
রোজিনা তার মেয়েকে বড় বোনের বাসায় রেখে ২০২২ সালে চট্টগ্রামে এসে পুনরায় গার্মেন্টেসে চাকরি নেন। গত ডিসেম্বর মাসে বাসার নিচের চায়ের দোকানে আকরামের সঙ্গে দেখা হয় রোজিনার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। গত এপ্রিল মাসের এক তারিখ থেকে বন্দরটিলা এলাকায় একত্রে বাসা ভাড়া নেন তারা। তবে বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক লেগেই থাকতো।
ঘটনার দিন ৩০ জুন রাতে রোজিনার সঙ্গে আকরামের ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রোজিনার মোবাইল নিয়ে আকরাম রোজিনার স্বামীকে ফোন করতে উদ্যত হয়। এসময় মোবাইল নিয়ে দুইজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে আকরামকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে সেখান থেকে খুলনা চলে যান রোজিনা। পরদিন সকালে বাসার কেয়ারটেকার রুমে তালাবদ্ধ দেখে আশপাশের ভাড়াটিয়াদের সহায়তায় দরজা ভেঙে ফেলে। পরে খাটের নিচে আকরামের লাশ দেখতে পায় তারা। এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
জেএন/এমআর