‘আমার গ্রাম আমার শহর’সহ ১৫ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ১০ কোটি ১২ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১২ হাজার ১৯২ কোটি ৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ সহায়তা থেকে ৫ হাজার ২৩৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৫৮৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ক্ষেত্রেই চাপে পড়ছেন সংশ্লিষ্টরা।’ এটি সমাধানে প্রধানমন্ত্রী ব্যয় এডজাস্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এম এ মান্নান বলেন, শুধু নির্মাণ সামগ্রিক দাম বৃদ্ধি নয় ডলারের দাম বৃদ্ধিতেও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা রকম জটিলতা তৈরি হচ্ছে, এসব বিষয়ে আরোও সচেতন হয়ে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নেও সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এমদাদউল্লাহ মিয়ান এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে শহরের মতো গ্রামেও আবাসনের জন্য ফ্ল্যাট সুবিধা, ইউনিয়নের রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, পানি ও স্যানিটেশন এবং টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।’
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৫টি ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিনটি গ্রামে ৬১৬টি ইউনিট বা ৬৮টি চারতলা আবাসন ভবন নির্মাণ করা হবে। মোট কথা শহরের সুবিধা গ্রামে দেয়ার জন্যই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তবে পাইলট প্রকল্পটি এমন সময়ে কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর আগ্রহেই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। তবে এমন প্রকল্প ভবিষ্যতে আর নেয়া হবেনা, এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যান্য গ্রামেও তা বাস্তবায়ন করবে সরকার।
এ ছাড়া একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হলো বড়পুকুরিয়া, বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি প্রকল্প। সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প। ঝিনাই, ঘাঘট, বংশী এবং নাগদা নদীর প্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য শুস্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ নিশ্চিতকরণ, নৌ-পথের উন্নয়ন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।
উলিপুর-চিলমারি সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। বেসরকারি ভবনগুলোর রেজিলিয়েন্সির জন্য ডিজাইন এবং নির্মাণের গূণগত মান বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প। পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের জন্য রেকর্ড ভবন নির্মাণ প্রকল্প। বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলা সেচ উন্নয়ন প্রকল্প।ডাবল লিফটিং পদ্ধতিতে পদ্মা নদীর পানি বরেন্দ্র এলাকায় সরবরাহ ও সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্প।
টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি কাম হটিকালচার সেন্টার স্থাপন ও উন্নয়ন প্রকল্প। ভূমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উড়িরচর-নোয়াখালী ক্রস ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প। চট্টগ্রাম জেলাস্থ পোল্ডার নং৭২ এর ক্ষতিগ্রস্ত বাধের স্থায়ী পুনর্বাসন ঢাল সংরক্ষণ প্রকল্প। দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ প্রকল্প। আমার গ্রাম আমার শহর পাইলট গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন:
নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশি। এর প্রভাব পড়ে প্রকল্প ব্যয়ে। রেট সিডিউল পরিবর্তন করা হবে। সরকারের উচ্চ আদালতের কর সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করার নির্দেশ।
পরিবেশ রক্ষা করে উপকূল নিয়ে সাবধানে প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ। মৌসুমী সবজি ও ফল সংরক্ষণের প্রকল্প নেয়ার নির্দেশ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয়হীনতা দূর করার নির্দেশ।
আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প পাইলট হিসেবে ১৫টি গ্রাম বাছাই করা হয়েছে। ওইসব গ্রামের ফলাফল দেখে অন্য গ্রামে অনুসরণ করতে বলেছেন। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় করতে বলেছেন।
জেএন/এমআর