রাজধানীর শাহজাহানপুর গুলবাগে যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত দু’জনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
শনিবার (২২ জুলাই) রাতে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা থেকে তাদের আটক করে র্যাব-৩। তারা হলেন- আদনান আসিফ ও মো. শাকিল।
র্যাব-৩ বলছে, পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিলেন যুবলীগ নেতা রুবেল। এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে শাহজালাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার শত্রুতা তৈরি হয়। এরপর উচিত শিক্ষা দিতে যুবলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়।
রোববার (২৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হত্যার শিকার অলিউল্লাহ রুবেল রাজধানীর শাহজাহানপুরে স্ব-পরিবারে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শান্তিবাগ এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিমের পাইকারি ব্যবসা তার। সম্প্রতি ওই এলাকায় পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মূলত এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে শাহজালাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার শত্রুতার তৈরি হয়। শত্রুতার কারণে ঘটনার একদিন আগে মালিবাগ পিডব্লিউডি সরকারি কলোনির মাঠে শাহজালালের নির্দেশে হাবিব, সানি, আলিফ, শাকিল, আসিফ এবং আরও কয়েকজন মিলে রুবেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন (২০ জুলাই) রাত ১১টার দিকে রুবেল বাসায় ফেরার পথে তার গলির মুখে অবস্থান নেয় আটক হওয়া আসিফ এবং শাকিল।
তিনি বলেন, সেখান থেকে আর একটু সামনে একই গ্রুপের সদস্য হাবিব, সানি, আলিফসহ অন্যরা রুবেলকে মারার জন্য দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করছিল। শাকিল এবং আসিফ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রুবেলকে হত্যার জন্য অপেক্ষায় থাকা হাবিবকে প্রতিনিয়ত রুবেলের অবস্থানের আপডেট দিতে থাকে।
এরপর রুবেল সামনে এগিয়ে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া হাবিব তার দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রুবেলের ওপর আক্রমণের চেষ্টা চালায়। তখন রুবেল বাঁচার জন্য দৌড়াতে শুরু করে এবং হাবিব ও অন্যান্যরাও তার পেছনে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে।
তিনি আরও বলেন, কিছুদূর দৌড়ে আসার পর ঘটনার দিন রাত ১২টা ৪০ মিনিটে শাহজাহানপুর থানাধীন ১৫৬ মালিবাগ বাজার রোড বিভাবরী বাড়ির সামনে এসে হাবিব ও তার দল রুবেলকে ধরে ফেলে এবং তাকে রাস্তায় ফেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এলোপাতাড়ি মাথা, দুই হাত, পা, পিঠসহ সারা শরীরে কোপাতে থাকে।
তারা যুবলীগ নেতার পায়ের পাতা কুপিয়ে শরীর হতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এ অবস্থায়ও বাঁচার জন্য রুবেল রক্তাক্ত শরীর নিয়েই এগিয়ে গিয়ে মালিবাগ সরলতা ভবনের সামনে রাস্তায় গুরুতর জখম ও রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আটক দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, মূল পরিকল্পনাকারী শাহজালালের পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। শাহজালালের সঙ্গে স্থানীয় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রুবেলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এতে শাহজালাল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে দায়িত্ব দেয়। এরই জের ধরে হত্যাকারীরা রুবেলকে হত্যার নীলনকশা সাজায় এবং সেই অনুযায়ী নৃশংসভাবে হত্যা করে।
র্যাব বলছে, শাকিল ও আসিফ ঘটনাস্থলে সক্রিয় অংশগ্রহণের পর দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যায়। শাকিল ও আসিফ পরদিন টঙ্গীতে শাকিলের এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গা-ঢাকা দেয় এবং অন্যান্যরা কুমিল্লার দিকে পালিয়ে যায়।
জেএন/এমআর