চট্টগ্রামের বিশিষ্ট্য সাংবাদিক একুশে পত্রিকার সম্পাদক আজাদ তালুকদার আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মঙ্গলবার ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। দীর্ঘ দুই বছর ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। গত ২০ জুলাই সর্বশেষ চিকিৎসা নিয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। ভর্তি হন রাজধানীর পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালে। সেখানে গত ২১ জুলাই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তাকে দেখতে যান।
বুধবার জোহরের নামাজের পর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে প্রথম জানাজে শেষে তার কফিন নেওয়া হবে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে। সেখানে দুপুর আড়াইটার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তাকে নেওয়া হবে গ্রামের বাড়ি উত্তর রাঙ্গুনিয়ায়। বাদে আসর তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচাী মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়েন সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম।
আজাদ তালুকদার ১৯৭৮ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর পদুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মৃত খায়ের আহমেদ তালুকদার, মা মৃত জাহান আরা বেগম। তাঁর বাবা খায়ের আহমেদ তালুকদার কর্ণফুলী পেপার মিলসের প্রাক্তন কর্মকর্তা; তিনি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রথম শিক্ষিত ব্যক্তি। ১৯৪৯ সালে রাঙ্গুনিয়া হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন, ১৯৫১ সালে কানুনগোপাড়া স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে কিছুদিন কর্ণফুলী পেপার মিলস, পাকিস্তানের করাচির বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এরপর নিজ এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে সমাজসেবা ও জনহিতকর কাজে জড়িয়ে পড়েন। যুক্ত হন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায়। ২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
আজাদ তালুকদারের মা জাহান আরা বেগম ১৯৭০ থেকে একটানা ১৫ বছর পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি (ইউপি মেম্বার) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্তরের দশকের পর চারদেয়ালে যখন বন্দি নারীজীবন, ঘর থেকে নারীদের বের হওয়াকেই যেখানে ‘অন্যায়’ এবং ‘পাপ’ হিসেবে বিবেচনা করা হতো তখনই জাহান আরা বেগম জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব নিয়ে নারীমুক্তি, নারীঅধিকারের কথা বলেছিলেন।
সাংবাদিক আজাদ তালুকদার ১৯৯৫ সাল থেকে বন্দরনগরীতে সাংবাদিকতা করে আসছেন। তিনি এর আগে একাত্তর টিভি, বৈশাখী টিভি, একুশে টিভি, অধুনালুপ্ত দৈনিক সকালের খবর, ট্রান্সকম গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন সাপ্তাহিক ২০০০, আন্তর্জাতিক ফিচার সংস্থা-সান ফিচার সার্ভিস, এফএম রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। বর্তমানে একুশে পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বিভিন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালে মাত্র ১৪ দিনে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতাল’ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আজাদ তালুকদার। করোনাকালে সবাই যখন চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে চিন্তায় অস্থির, তখনই তাঁরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। সাংবাদিক হিসেবে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
তাঁর লেখা ‘রিপোর্টারের ডায়েরি’, তাঁর রচিত ‘স্বপ্নফেরি’ বইটি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে বর্ণনা প্রকাশনী।
জেএন/এমআর