মাছের বাজারে দোকানিদের হাঁকডাকে অনেকটাই প্রচলিত শব্দ গরিবের পাঙাশ। কিন্তু সেই প্রচলিত বাক্য এখন প্রায় উল্টে গেছে। গরিবের পাঙাশ কিনতেও এখন হিমশিম খাচ্ছে মধ্যবিত্তরা। ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরের মাছটি চলতি বছরের শুরুতে ১৮০ টাকায় ঠেকেছিল। বছরের মাঝামাঝিতে সেই দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজিতে। ফলে গরিবের পাঙাশও এখন ছোঁয়া কঠিন মধ্যবিত্তের।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাঝারি সাইজের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। আর বড় সাইজের এ মাছটির দর প্রতি কেজি ২৪০ টাকা।
এছাড়াও বাজারে, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে তাঁজা রুই বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায়। কই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, তেলাপিঁয়া প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪৬০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, রুপ চাঁদা প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা, ইলিশ ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ১২০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর পাহাড়তলূ বাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল ইসলাম তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘বাজারে গরিবের মাছ ছিল পাঙাশ, চাষের কই, তেলাপিঁয়া কিন্তু এখন এসব মাছের দামও অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। যা মধ্যবিত্তের জন্যও কেনা কঠিন। আগে পাঙাশ মাছ কিনেছি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, তাও খুব বেশি ক্রেতা পেত না বিক্রেতারা। কিন্তু এখন পাঙাশের দাম ২২০ টাকা হয়ে গেছে। যে কারণে মধ্যবিত্ত ক্রেতারও পাঙাশ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। যেহেতু বাজারে অন্য মাছের দাম আরও বেশি সে কারণে ২২০ টাকা কেজি দরেই একটি পাঙাশ কিনলাম।’
একই বাজারে মাছের দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে সব মাছের দামই বেশি। মূলত মাছের ফিডের (খাবার) দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই সব ধরণের মাছের দাম বাড়তি। বাজারে বেশি বিক্রি হওয়া পাঙ্গাস, তেলাপিঁয়া, চাষের কই মাছ এখন আর আগের মত বেশি বিক্রি হয়না। কারণ এগুলোরও দাম বেড়েছে। সাধারণ ক্রেতারা ভালো মানের মাছ এখন আর তেমন কিনতে পারে না।’
অন্যদিকে বাজারে সবজির দামও বেড়েছে। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে—পটল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, গোল বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা আর লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, গাঁজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কাঁচা কলার প্রতি হালি ৪০ টাকা, ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, জলি প্রতি পিস ৬০ টাকা, কঁচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢেড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ২০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ২২০ টাকা, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩৮০ টাকা, সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির মাংস প্রতি কেজি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কর্ণফুলী বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসে রবিউল হোসেন বলেন, ‘বাজারে মিষ্টি কুমড়া আর কাঁচা পেঁপের কেজি ৪০-৫০ টাকা। বাকি সব সবজি ৬০ টাকা বা তার ওপরে। সামান্য সবজির দামই যদি এত হয় তাহলে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা কি খাবে। এছাড়া টমেটো ২০০ টাকা, করোলা, বেগুন ১০০ টাকা, এগুলো কেনার কথা এখন চিন্তাও করতে পারছি না। মাঝখানে কয়েকদিন সব সবজির দাম কিছুটা কমেছিল কিন্তু এখন আবার বাড়তি দাম। হঠাৎ করে কখন বাজার বেড়ে যায়, আমরা কিছুই বুঝিনা। আসলে হঠাৎ হঠাৎ কারা বাজার বাড়িয়ে দিচ্ছে সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ। নয়তো আমাদের মত সাধারণ মানুষের কেনাকাটার বিপদ বাড়ে।’
একই বাজারে সবজি বিক্রেতা মোজাহিদ হাওলাদার বলেন, ‘কয়েক দিনে সবজির বাজার একটু বেড়ে গেছে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেমন দামে সবজি কিনে আনি তেমন দামেই খুচরা বাজারে বিক্রি করি। কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে ক্ষেত থেকে ফসল তুলতে পারছিল না কৃষকরা। সে কারণে বাজারে সরবরাহ কম ছিল। তাই সব ধরণের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি কমে গেলেই হয়তো আগের দামে ফিরে আসবে।’