চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন ডিমের দামে কারসাজির বিভিন্ন অনিয়মের প্রমান পেয়ে জরিমানা করেছেন। আর এ জরিমানাকে ব্যবসায়ীরা হয়রানি বলে দাবি করে হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। তাদের এই ঘোষনার প্রতিবাদ জানিয়ে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকান্ড নিষিদ্ধসহ তাদের সদস্যদের দোকানগুলো সিলগালা করার এবং প্রয়োজনে সিন্ডিকেটের হোতাদেরকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির অনিদিষ্ঠ কালের জন্য ডিম বিক্রি বন্ধের ঘোষনার প্রতিবাদে ২৮ আগস্ট গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, আকবরশাহ থানার সভাপতি ডাঃ মাসবাহ উদ্দীন তুহিন ও পাহাড়তলী থানার হারুন গফুর ভুইয়া প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই সরবরাহ জনিত জটিলতা না থাকা সত্তে¡ও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিমের বাজার অস্থির করে তুলেছেন মধ্যসত্ত্ব ভোগী ডিমব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো। ভোক্তা অধিকার ও জেলা প্রশাসন সুনির্দিষ্ঠ প্রমানসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ডিমব্যবসায়ী ও আড়তদাররা ‘হয়রানি’র শিকার হচ্ছেন, এমন ভুঁয়া দাবি তুলে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রাখার ঘোষনা দিয়েছেন। তাদের এই ঘোষনাই প্রমাণ করে অসাধু চক্র ডিম ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ও অধিক মুনাফা আশায় কারসাজি করে ডিমের দাম বাড়িয়েছেন। এখন যখন প্রশাসন সেই কারসাজির প্রমান পেয়েছেন তারা এটা ঠেকাতে নিজেরা বেচাকেনা বন্ধের ঘোষনা দিয়ে “শাকদিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন”।
নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন রাখেন, ব্যবসায়ীরা পাকা রশিদ, মূল্য তালিকা টাঙ্গানোসহ সরকারি নিয়মকানুন মেনে, কোন প্রকার কৃত্রিম সংকট ও কারসাজি না করে ব্যবসা করেন তাহলে তাদের ভয় পাবার কি আছে? তারা একদিকে অপরাধ করবে, অপর দিকে সরকারি আইনের প্রতি বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করবে। আর প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেন তখন আবার হয়রানী ধুঁয়া তুলেন। একটি সভ্য সমাজে এর চেয়ে ঘৃণিত কাজ আর হতে পারে না। বিষয়টি অনেকটাই “চোরের মা’র বড় গলার মতো”।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের এখন সর্বত্র অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর সংস্কৃতি। কিছু হলেই তাঁরা এজন্য দায়ী নয়, দায়ী করপোরেট গ্রুপ, আমদানি কারক ইত্যাদি বলে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ঘটনার মোর অন্যদিকে কিভাবে ফেরানো যায় সে চেষ্টাই করা থাকেন। আর ধরা পড়লেই আমাদেরকে নীতিমালা দেয়া হোক ইত্যাদি নানা প্রস্তাবনা দেন। অথচ ব্যবসা কিভাবে করবে, সে বিষয়ে ভোক্তা সংরক্ষন আইন ২০০৯ এ বিস্তারিত বর্ননা থাকলেও তাদের সেই খুড়া যুক্তি “আমরা জানি না”, “আমাদেরকে নতুন নির্দেশনা প্রদান করা হোক”।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সপ্তাহ দু’এক আগে যে ডিম প্রতি শত ১ হাজার ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, সেখানে কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা ১ হাজার ২৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করছেন। সরবরাহে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ও সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। কখনো মসলা, কখনো চিনি, কখনো তেল, কখনো ডিম এভাবে একেকদিন তাঁরা একেক পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। যখন প্রশাসন অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন, তখন ক্রয়মূল্যের কোনো পাকা রশিদ থাকে না, মূল্য তালিকা বা সরকারি নিয়ম নীতি পালনের বালাই থাকে না। আর জনস্বার্থে এসব অস্থিরতা বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা নানা টালবাহানা তুলে আইন প্রয়োগকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য নানা ফঁন্দি ফিকির ও ষড়যন্ত্রে মাতোয়ারা হন।
জেএন/এমআর