নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন ১৬০ জন বিশ্বনেতা। পরবর্তীতে এতে আরও ১৫ বিশ্বনেতাসহ ২৩ জন স্বাক্ষর করায় করায় এই সংখ্যা বেড়ে ১৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদও তারা দিয়েছেন।
চিঠিতে যারা সই করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন শতাধিক নোবেলজয়ী। এই চিঠি এমন একটি সময়ে দেওয়া হলো যখন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় অভিযোগ গঠন বাতিলে ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর ফলে শ্রম আদালতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এ মামলার বিচার চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ অন্যরা এই চিঠিতে সই করেছেন। তাদের একজন রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস এক বিজ্ঞপ্তিতে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতির অগ্রগতির প্রশংসা করি। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনকালীন প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের প্রতি হুমকির ক্ষেত্রে উদ্বেগ হিসেবে দেখছেন চিঠিতে সই করা ব্যক্তিরা। তারা বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটি ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন, এই চিঠিটি তারই ধারাবাহিতা। আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবে পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করলেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগসহ আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হবে। আমরা নিশ্চিত যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর যেকোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে তিনি খালাস পাবেন।
ড. ইউনূসের অবদান তুলে ধরে বিশ্বনেতারা বলেন, আপনি জানেন যে, কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণে আন্তর্জাতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন, তিনি তার একটি বড় উদাহরণ। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানিমুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি একটি যথাবিহীত, নিরপেক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে লেখা হয়েছে, পাশাপাশি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করবেন। কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয়, তা বিশ্ববাসীর মতো চিঠিতে সই করা ব্যক্তিত্বরাও ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
এর আগে গত রোববার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তারও আগে গত মার্চে ৪০ জন বিশ্বনেতা একটি চিঠিতে সই করছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে তার দেশের সবচেয়ে দক্ষ ও প্রশংসিত নাগরিকদের একজনের বিরুদ্ধে বিবেকহীন প্রচারণা বন্ধ করতে আহ্বান জানান।
জেএন/এমআর