দক্ষিণ এশিয়া তথা দেশের প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত সরকারের মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এ টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে মূল টানেলের কাজ শতভাগ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের সার্বিক অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম সর্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত হয় প্রস্তুতিমূলক সভা।
এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন। সভায় টানেলে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচল ও টানেল কার্যক্রম পরিচালনায় লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান।
টানেলে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলে জনপ্রতিনিধিদের দাবির প্রেক্ষিতে সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন বলেন, টানেলে কোন কোন গাড়ি চলবে তা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
টোলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ডিজাইন অনুযায়ী, টানেলের ভিতর ৮০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চলবে। যেহেতু টানেল কনসেপ্ট আমাদের জন্য নতুন, সেজন্য কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। টানেল অন্য যেকোনো ব্রিজ বা সড়কের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হচ্ছে। সেই ধারণা থেকে এই মূহুর্তে বাইক ও থ্রি-হুইলার চালানো টানেলের জন্য নিরাপদ হবে না। এতে টানেলও নিরাপদ থাকবে এবং যারা টানেল ব্যবহার করবেন তারাও নিরাপদ থাকবেন।
সেতু সচিব বলেন, ট্যানেলের মধ্যে জনসাধারণের জন্য নির্দেশনা ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানে আটটি রেডিও চ্যানেলে অটোমেটিকভাবে নির্দেশনাগুলো চলতে থাকবে। টানেলের ভেতর যেই ফ্রিকোয়েন্সি থাকুক না কেন অটো এ দিকনির্দেশনা চলবে গাড়ি যতক্ষণ ট্যানেলে থাকবে।
সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, টানেল নিয়ে মিথ্যা বা নেতিবাচক প্রচারণা হতে পারে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মিথ্যা নেতিবাচক প্রচারণা চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ বলেন, টানেলের ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কাজ শেষে হওয়ার পর প্রি কমিশনিং ও কমিশনিং দেখা হয়েছে। এছাড়া সবগুলো সিস্টেম কাজ করছে কিনা কয়েকবার করে দেখা হয়েছে। মূল টানেলের কাজ শতভাগ শেষ। তবে পুরো প্রকল্পের কথা বললে অগ্রগতি ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ। যে ১ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে তা চলাচলে জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এপ্রোচ রোড, সার্ভিস এরিয়া, পুলিশের ফাঁড়ি নির্মাণ ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম চলছে।
সভায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে টানেলে জরুরি মুহুর্তে সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশের গাড়ি টোল ফ্রি চলাচলে অনুমতি চাওয়া হয়।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশন তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, টানেলর প্রকল্প পরিচালক হারুন উর রশিদ, আনোয়ারা উপজেলা চেয়রাম্যান মো. নজরুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ টানেলটির নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। নগরের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক রয়েছে। এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের বাংলাদেশ নেভাল অ্যাকাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হওয়া এই টানেল নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছাবে।
জেএন/এমআর