ভালো থাকার জন্য ট্যুরিজম প্রয়োজন। তাছাড়া অর্থনীতি বিধ্বস্ত কোন দেশকেও মুল চালিকাশক্তি হয়ে দেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে ট্যুরিজম। তার জলন্ত প্রমাণ শ্রীলংকা।
যে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে পুরোপুরি দেওলিয়ার উপক্রম,সে বিধ্বস্ত দেশটি ট্যুরিজম সেক্টর প্রসারিত করে মাত্র দুবছরের মধ্যেই ঘুরে দাড়িয়েছে।
আমাদের দেশেও রয়েছে ট্যুরিজম নিয়ে অপার সম্ভাবনা। পর্যটন খাতকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, চাঙ্গা করে তোলা হয়-তাহলে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
আর সে টার্গেট মাথায় নিয়ে এবং চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে ট্যুরিজম নিয়ে বেশ কিছু মহাপরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ১০টায় বিশ্ব পর্যটন দিবসের আলোচনা সভায় তিনি তার মহাপরিকল্পনা গুলো একে একে তুলে ধরেছেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশ্ব পর্যটন দিবসের আলোচনা সভায় তিনি বলেন, দেশে আগের তুলনায় আমাদের ডোমেস্টিক ট্যুরিজম অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রামেও অনেক ট্যুরিস্ট স্পট রয়েছে, তবে সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না।
পর্যটক বাস সংখ্যা বাড়ানো হবে : ডিসি বলেন, আমাদের পতেঙ্গা সী-বীচে যাওয়ার জন্য জনসাধারণের অনেক ভোগান্তি হয়। সেটির কথা বিবেচনা করে আমরা বিআরটিসির সাথে যোগাযোগ করেছি।
সৌভাগ্যবশত সড়ক ও মহাসড়কে বিভাগের সচিবের সাথে যোগাযোগ করার পর বিআরটিসি’র চেয়ারম্যান সাথে সাথে রাজি হয়ে ২টি পর্যটক বাস দিয়ে দিয়েছেন (১টি ছাদ খোলা)।
আমি আরও ৪টি বাস চেয়েছি, এর মধ্যে আরও একটি ছাদ খোলা বাস গতকাল এসেছে। আমরা আশা করছি, আরও কিছু ছাদ খোলা বাস চট্টগ্রামে পাবো এবং ট্যুরিস্টদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। বিআরটিসির কাছে মেয়েদের জন্য ৪টি ডেডিকেটেড বাস চেয়েছি, আশাকরি সেগুলো আমরা পাবোই।
রিভার ক্রুজ চালু : এদিকে আগামী ১ থেকে দেড় মাস অর্থ্যাৎ আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রিভার ক্রুজ চালু করার কথা জানিয়ে এ ব্যাপারে ওয়েস্টার্ন মেরিন ও কর্ণফুলি নামক দু’টি বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক। তারা দুটো জাহাজ দেবে এবং প্রাথমিকভাবে শুক্র-শনিবারে এগুলো চালু করার কথা বলেছেন।
প্রাইভেট ট্যুর অপারেটর : ডিসি চাই, যারা প্রাইভেট ট্যুর অপারেটর আছে তাদেরকে নদীতে ডে ট্যুর বোট চালু করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। বলেছিলাম আমরা সার্ভিস প্রোভাইডার না হলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।
প্রাইভেট ট্যুর অপারেটরদের উদ্দেশ্যে ডিসি বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ব্যবসা করার কথা নয়, ছোট ইনভেস্টমেন্ট করেন, লস হওয়ার চান্স নেই, যদি লোন লাগে তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে আমি অনুরোধ করবো।
ট্যুরিজমের জন্য বেসরকারী পর্যায়ে সদরঘাট টু কাপ্তাই পর্যন্ত নদী পথে ছোট ছোট বোটকে টার্গেট করতে পারেন। কাপ্তাই রুটে একটি চমৎকার নদী পথ রয়েছে। আপনারা বোট চালু করলে লসের কোন চান্স নেই।
সিটি বেইজ ট্যুরিজম: চট্টগ্রাম সিটি বেইজ ট্যুরিজমের কিছু সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন দেশে মাজার কেন্দ্রিক ট্যুরিজম আছে। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার ও আমানত শাহ’র মাজার, শুধু চট্টগ্রামে নয়, দেশ-বিদেশে পরিচিতি আছে, সেখানকার পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এখানে আসে, তাদের জন্য এসি মাইক্রোবাস চালু করা যেতে পারে।
ফটিকছড়িতে টি গার্ডেন রয়েছে। সেখানে ডে ট্যুর চালু করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, কর্ণফুলী টানেল হয়ে যাচ্ছে। এটি চালু হলে আমরা পার্কি বীচসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটের জন্য ডে ট্যুর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিআরটিসির এসি বাসগুলো দেয়া হলে টানেলভিত্তিক ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করতে চাই।
চট্টগ্রামের যেসব পর্যটক স্পটে ট্যুরিজম হতে পারে : জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতবর্ষের যে বিদ্রোহের সুতিকাগার চট্টগ্রাম।
ইউরোপিয়ান ক্লাব, মাস্টার দা সূর্য সেনের পৈত্রিক ভিটা, ফয়স লেক, চিড়িয়াখানা আছে, সেগুলো নিয়ে আপনারা ট্যুরিজমের চিন্তাভাবনা করতে পারেন।
ট্যুরিজম যেভাবে আয় হতে পারে : অনেক দেশি-বিদেশী এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিতে চাই। কাট্টলীর রানী-রাসমনি ও আকমল আলী ঘাটে জেলে পল্লী আছে, তাদেরকে নিয়ে কথা বলতে পারেন।
৫/১০টি পরিবার নিয়ে তাদের লাইফ স্টাইল নিয়ে আপনারা কাজ করতে পারেন, তাবু নিয়ে অবস্থান করে দেখতে পারেন যে তাদের জীবন কেমন কাটে। তাদের খাবারের ব্যবস্থাসহ সেখানে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম করতে পারেন।
ট্রাইবাল কমিউনিটি, ফিস মার্কেট, টি গার্ডেন নিয়ে কাজ করতে পারেন, এগুলো চট্টগ্রামের ঐতিহ্য।
নৌকা মিউজিয়াম : চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে নৌকাগুলো রয়েছে সেগুলোর স্মৃতি নিয়ে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকার ২৫ একর জায়গার উপর গড়ে উঠা ডিসি পার্কের পাশে একটি নৌকা মিউজিয়াম করা হবে।
সেখানে বড় আকারে ময়ুর-পঙ্খী, বজরা, সাম্পান, বিভিন্ন ধরণের নৌকার রেপ্লিকা থাকবে। ভবিষ্যতে এগুলোতে থ্রিডির মাধ্যমে এগুলোর ফ্যাসিলিটিস রাখার বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে করে ঝড়ের সময় জেলে ও মাঝি-মাল্লারা নৌকা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা সাজাতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হবে। পাশাপাশি গুলিয়াখালী বীচ ও খৈয়াচড়া বীচের রাস্তা প্রশাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া পতেঙ্গা সী-বীচের বর্তমান বেহাল অবস্থা উল্লেখ করে ডিসি বলেন, সেখানে টয়লেট-ওয়াশরুম স্থাপন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, লকার রুম, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ব্রেস্টফিডিং কর্ণার স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
পর্যটন এলাকা হিসেবে শুধু পতেঙ্গা সী-বীচে নয়, প্রত্যেক পর্যটন স্পটে ট্যুর আপারেটরদের নিয়ে হোটেল-রেস্টুরেন্ট উন্নতমানের খাবারের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হবে।
জেএন/পিআর