বান্দরবানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মহাপিণ্ড দানের মাধ্যমে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) সকালে উৎসবের শেষদিনে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার থেকে দুই শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু খালি পায়ে সারিবদ্ধভাবে লাইন ধরে মহাপিণ্ড গ্রহণে বের হন।
বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বান্দরবানের পাহাড়ি অধ্যুষিত মধ্যমপাড়া-উজানীপাড়া ঘুরে ঘুরে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী-পুরুষের কাছ থেকে ছোয়াইং ও পিণ্ডদানের অর্থ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ দুই কিলোমিটার পথ পর্যন্ত পাহাড়ি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা রাস্তার একপাশে প্যান্ডেল টাঙিয়ে সারিবদ্ধভাবে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং, চাল, নগদ টাকা, চীবর, মোমবাতিসহ উৎসবের নানা সামগ্রি দান করেন।
পূণ্য লাভের আশায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ভিক্ষুদের পিণ্ডদানের পাশাপাশি মিষ্টান্নও দান করেন। এছাড়া বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সামনে থাকা বৌদ্ধ মূর্তিকে পূজা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপিসহ পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নেতারাও।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা জানান, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাসের (উপোস) থাকার পর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় দায়ক-দায়িকারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্মানে বান্দরবানের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করে। এই উৎসবে পাহাড়িরা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নতুন তুলা থেকে চর্কার মাধ্যমে সুতা তৈরি করে ধর্মীয় গুরু বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধানের জন্য চীবর কাপড় বুনে দান করেন। কোনোপ্রকার সেলাই ছাড়া তৈরি করা চীবর কাপড় ক্যায়াংয়ে-ক্যায়াংয়ে গিয়ে ধর্মীয় গুরু বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিতরণ করা হয় এ উৎসবে।
প্রচলিত আছে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধের মহাপূণ্যবতী নারী বিশাখা দেবী এই কঠিন ব্রত পালন করে বুদ্ধকে চীবর দান করেছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছর বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়।