চট্টগ্রাম নগরের বাজারগুলোয় সবজির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজিভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ৫–১০ টাকা। বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে।
ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চট্টগ্রামে সবজির বাজার চড়া। দাম না কমায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। এছাড়া তেল ও চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের বাজারেও স্বস্তি নেই। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে এসব পণ্যের দাম কাঙ্ক্ষিতভাবে কমছে না।
চট্টগ্রামের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমী শাক সবজিতে বাজার ভর্তি থাকলেও দাম আগের মতোই রয়েছে। এছাড়া তেল, চিনি, আটার সাথে মাছের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাজারে আসা ভোক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বাজার সবজিতে ভরপুর। কিন্তু দাম কমছে না। এমন ভরা মৌসুমেও যদি দাম না কমে তাহলে অন্যসময় কী হবে? জীবনযাত্রার ব্যয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিন্তু আয় তো বাড়ছে না।
এভাবে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ সময় মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার তদারকি করার দাবি জানান তারা।
ক্রেতাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে বিক্রেতারা জানান, নতুন আলু ছাড়া বাজারে বাকি সব তরকারির দাম আগের চেয়ে কিছুটা হলেও কমেছে। সামুদ্রিক ও মিঠা পানির মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চতুর্থ দফায় অবরোধের দ্বিতীয় দিনে চট্টগ্রামে আরেক দফা বেড়েছে সবজির দাম।
চট্টগ্রামের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমী শাক সবজিতে বাজার ভর্তি থাকলেও দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। চট্টগ্রাম নগরের বৃহত্তর সবজির আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রাহক কম থাকায় বেচাবিক্রিও কমেছে আড়তগুলোতে। খরচ বেশি পড়ায় অনেক ব্যাপারী আজ সবজি নিয়ে চট্টগ্রামে আসেননি।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার,কাজির দেউড়ি ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবজিভেদে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বাজারে বরবটি, শিম, বেগুন, পটোল, মুলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, করলা ইত্যাদি সবজির দাম বেড়েছে।
গতকাল এসব সবজি বিক্রি হয়েছিল ৫৫ থেকে ৭০ টাকায়। তবে আজ একই সবজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে।
প্রতিকেজি বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজার ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। পাশাপাশি প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগির বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে।
দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। আর প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০ ও খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঙ্গাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া মাছের কেজি ২২০ থেকে ২৮০ টাকা। প্রতি কেজি রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগেও কেজিপ্রতি এলাচ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। এখন একই মানের এলাচের দাম উঠেছে ২ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। গোলমরিচের দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ টাকায়, দারচিনির (সাধারণ) দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে ৩৮৫ টাকায়।
এছাড়া প্রতি কেজি দেশীয় মরিচের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৯০, ভারতীয় শুকনা মরিচ ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ২৮০, ভারতীয় হলুদের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে ২০০, দেশীয় হলুদের দাম একই পরিমাণ বেড়ে ২০০, কালিজিরার দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ২৪০, মেথির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১২৫, ধনিয়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে ১৮৫, রাঁধুনির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অধিকাংশ মসলাপণ্যের দাম বাড়লেও বর্তমানে জিরা, ও তেজপাতার দাম নিম্নমুখী। কয়েক মাস ধরে এ তিন মসলার দাম টানা বাড়লেও বর্তমানে কমতে শুরু করেছে। গতকাল বাজারে কেজিপ্রতি জিরার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে ৯৮০ টাকা ও তেজপাতার দাম ২০-৩০ টাকা কমে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার ফারুক শিবলী বলেন, ভাড়া বাড়তি হলেও ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে সবজিভেদে। সামনে শীতের মৌসুমে বাজারে প্রচুর সবজি সরবরাহ হবে। তাই দু-এক দিনের জন্য দামের খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না বাজারে।
জেএন/হিমেল/আর এস