দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ খুলে গেল দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ এবং চট্টগ্রাম নগরের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দ্বার। এতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রাম। প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামেই হবে এ এক্সপ্রেসওয়ে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্প উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের আরও ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর কিছুদিনের মধ্যেই নগরীর পতেঙ্গা সি-বিচ থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ যান চলাচলের জন্য কিছুদিনের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে।
মূল সড়কের অবশিষ্ট অংশ নগরের টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত (এক কিলোমিটারের একটু বেশি) নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর আগামী মাসের শেষ দিকে অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে মূল এক্সপ্রেসওয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দিলে পুরোপুরি সুফল ভোগ করতে পারবে চট্টলাবাসী।
চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই উড়াল সড়কে মাধ্যমে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা যাওয়া করতে সময় লাগবে মাত্র ১৮ থেকে ২০ মিনিট। এ এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের কানেক্টিভিটি সহজ করে বিপুল অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায় বাণিজ্যে বাড়াবে গতি।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন,সম্প্রতি চট্টগ্রাম এসে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেছেন দেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ বঙ্গবন্ধু টানেল। এটি চালুর পর থেকেই পতেঙ্গা এলাকায় যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। তাই দ্রুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করার চেষ্টা করছি।
আজ সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে উদ্বোধন হলেও এখন এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলবে না। কিছুদিনের মধ্যে আমরা বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেবো। যেসব কাজ এখনো শেষ হয়নি তা দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম শহরের শিল্পাঞ্চল (ফৌজদারহাট, নাসিরাবাদ ও কালুরঘাট শিল্পাঞ্চল) ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এ লক্ষ্যে মহানগরীর লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ এলিভেটেড নির্মাণ।
চউক সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে ২টি, আগ্রাবাদে ৪টি, ফকিরহাটে ১টি, নিমতলায় ২টি, সিইপিজেডে ২টি এবং কেইপিজেড এলাকায় ২টিসহ মোট ১৪টি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে।
২০১৭ সালে একনেকে ‘চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ২০১৮ সালে এর কাজ শুরু হয়। তবে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে নক্সা ‘সংশোধন’ করা হলে আরও এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি এবং কাজ শেষ করার মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারিক বিল্ডিং-আগ্রাবাদ চৌমুহনী-দেওয়ানহাট-টাইগারপাস ও লালখান বাজার হয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখে শেষ হবে।
গত ২৪ আগস্ট চউকের বোর্ড সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তুাব অনুমোদিত হয়।
এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে নগরী থেকে গাড়িগুলো যানজট এড়িয়ে এয়ারপোর্ট হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে চলে যেতে পারবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম। একইভাবে সেখান থেকে আসতে পারবে নগরীর যানজট এড়িয়ে শহরের আরেক প্রান্তে।
তাছাড়া সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় আরও একটি নতুন দুয়ার খুলছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেটি হলো পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল (পিসিটি)। দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার অপারেশনাল কাজে যুক্ত হল নতুন আরেকটি টার্মিনাল পিসিটি। এতে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে যুক্ত হয়ে আজ আরো ১০টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন। সেগুলো হল, বে-টার্মিনাল মাস্টারপ্ল্যান, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় সিজিএস কলোনিতে জরাজীর্ণ ১১টি ভবনের স্থলে ৯টি বহুতল ভবনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি নির্মাণ, ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক নির্মাণ, সিরাজুদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়ক (বাকলিয়া এক্সেস রোড), চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ারা-ফৌজদারহাট গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ, চট্টগ্রাম-ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস সঞ্চালন সমান্তরাল পাইপলাইন নির্মাণ, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ ও কেজিডিসিএল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের ২৫২ তম কিলোমিটারে মুরালী খালের ওপর ১২১ মিটার দীর্ঘ ভেল্লাপাড়া সেতু নির্মাণ।
জেএন/রাজীব