যদি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোঃ ইব্রাহিমকে হাটহাজারী থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাহলে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঠে রাখা যাবে কিনা তা একটি বড় প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা কিংবা মীর নাছির পুত্র মীর হেলালের মধ্য থেকে একজনকে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে বাঘে-মহিষে একঘাটে জল খাবে কিনা তা দেখতেও অপেক্ষা করতে হবে আর ক’টা দিন।
শুধু এ আসনটিই নয়, অভ্যন্তরীন কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপি চট্টগ্রামজুড়ে ১৬টি আসনে কাদের মনোনয়ন দিচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। দলটির হাইকমান্ডকে কোন্দল নিরসনে কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতেও এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
পরিস্থিতি এখন এমন, ‘নিজ নেতা’দলীয় মনোনয়নে না পেলে রাজনীতিও ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসেছেন অনেকে। দীর্ঘ ১২ বছর পদ-পদবী ছাড়া নেতা-কর্মীরা বিপর্যস্ত মামলা-হামলায়। পছন্দের প্রার্থী না পেলে নির্বাচনের পর মামলা থেকে বাঁচতে অনেকে আবার দল বেঁধে পদত্যাগের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসও পাওয়া গেছে।
বিশ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোঃ ইব্রাহিম বীরপ্রতীক। তিনি জোটের হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান তাঁর জন্মস্থান হাটহাজারীতে। যেটি চট্টগ্রাম-৫ আসন নামে পরিচিত। একই আসনে নির্বাচন করতে চান এই আসন থেকে বিএনপির টিকিটে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ মরহুম সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন সাবেক ‘টেকনোক্র্যাট’প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল। পিতা মীর নাছিরের বলয়ের বাইরে তাঁর নিজের শক্ত অবস্থান রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও উত্তর জেলা বিএনপি, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে। শাকিলা-হেলাল দুই ব্যারিস্টারই মামলায় নাজেহাল দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে আছেন সমানতালে। বিএনপি যদি জোটের দিকে তাকিয়ে সৈয়দ ইব্রাহিমকে মনোনয়ন দেয় তবে বিএনপির বিশাল একটা অংশ নিষ্ক্রিয় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার এক নেতাকে মনোনয়ন দিলে অন্য নেতার অনুসারীরা অসহযোগিতা করবে বলেও আশংকা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ আংশিক) আসনে বিএনপির টিকিটে আবারও মনোনয়ন চাইছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। একসময়ের মোরশেদ খান বিরোধী এরশাদ উল্লাহ আর নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ানও মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন। ঐ এলাকার নেতা-কর্মীদের অভিযোগ মোরশেদ খানকে কবে এলাকায় দেখা গেছে তা কারো স্মরণ নেই। তবে হাইকমান্ডে তাঁর ব্যাপারে সুদৃষ্টি থাকায় ধানের শীষের মনোনয়ন তাঁর পক্ষে আসতে পারে। এক্ষেত্রে একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী এরশাদ উল্লাহকে পাশে পেতে পারেন মোরশেদ খান।
এ আসনে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতার শীর্ষে রয়েছেন আবু সুফিয়ান। তিনি নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি। আন্দোলন সংগ্রামে যখন বিএনপির হেভিওয়েট নেতারা অনুপস্থিত ঠিক সেই মুহূর্তে দলের কান্ডারী হিসেবে সুফিয়ানই ছিলেন ভরসা। দলের মূল্যায়ন-বিবেচনায় হাইকমান্ড সুফিয়ানকে কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে তা দেখা যাবে এবারের নির্বাচনে।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন বিএনপির ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি নগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সামসুল আলমকে এই আসন ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন করেন চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে। ২০০৮ সালে সামসুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বী নুরুল ইসলাম বিএসসির কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। তার পরের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। এবার এই আসন থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, আশা ছাড়েননি সামসুল আলমও। শাহাদাত-বক্কর কিংবা নোমান-সামসুল যাকেই এই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, এখানে গ্রুপিং রাজনীতির বলি হতে পারে ধানের শীষের প্রার্থী।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের দিকে নজর সাবেক মন্ত্রী ও নগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমানের। তিনি জয়নিউজকে জানান, বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমি এই আসনের ভোটারদের কাছে গিয়েছিলাম। তারা আবারও সুযোগ পেলে আমাকে নির্বাচিত করার অপেক্ষায় আছেন।
তবে বিপত্তি অন্য জায়গায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ নোমান অনুসারীরা। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এই আসন নিয়ে এখনো অনড়। শেষপর্যন্ত খসরু যদি চট্টগ্রাম-১০ না ছাড়েন সেক্ষেত্রে নোমান অনুসারীরা তাঁকে কতটুকু সহযোগিতা করবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত। কারণ, নোমান শুধু চট্টগ্রাম নগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিই নন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত তিনিই একমাত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতি। নগর ছাড়িয়ে পুরো চট্টগ্রামজুড়েই আছে নোমানের হাতে গড়া নেতা। নোমানের প্রেস্টিজ ইস্যুতে তারা যদি বেঁকে বসেন তবে কোন্দলের আগুনের প্রভাব পড়তে পারে নগরীর সবক’টি আসনে।
নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ান জয়নিউজকে বলেন, নির্বাচনে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে তৃণমূলের মন মেজাজ ও প্রার্থীর জনসম্পৃক্ততা যাচাই করে মনোনয়ন দেওয়া উচিত। না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দল। আশা করি নগরের সবক’টি আসনে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হবেন।