চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট এলাকার ইলিজি স্কাই পার্ক নামক একটি মার্কেটে একই সময়ে তিনটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
চোরের দল তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে লুটে নিয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের ৫৮টি মোবাইল সেট, স্বর্ণালংকার, রুপা ও ক্যাশে রক্ষিত নগদ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল।
পরদিন সোমবার সকালে মার্কেটে এসে দোকান মালিকরা চুরির বিষয়টি জানতে পারে। তৎক্ষনাত মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্থ দোকানদাররা।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় রবিবার মধ্যরাত ৩টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে চোরের দল মুখে মাস্ক পড়ে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনাটি ঘটায়। চুরির ঘটনায় জড়িত রয়েছে ওই মার্কেটেরই তিন নিরাপত্তা প্রহরী।
পরে চট্টগ্রাম থেকে একজন এবং ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে আরো দুজনসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পাঁচলাইশ মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেফতার তিন নিরাপত্তা প্রহরী হলেন, চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভী পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ দত্ত প্রকাশ বাবুল দামের ছেলে শুভ দত্ত প্রকাশ রিপন দাশ (২৪), একই এলাকার সোলায়মান ও খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা থানা হাফছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রুহুল আমিনের ছেলে মনির হোসেন (২৫)।
আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে উপ পুলিশ কমিশনার উত্তরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এসব তথ্য সাংবাদিকদের জানান উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) পঙ্কজ দত্ত।
তিনি বলেন, দোকান মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে মঙ্গলবার রাতে ওই মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরী সোলায়মানকে আটক করি। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে ঢাকার আব্দুল্লাহপুরের একটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে শুভ ও মনির নামে আরো দুই নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করা হয়।
ওই বাসা থেকে উদ্ধার হয় চুরি করা ৫১টি মোবাইল সেট, ৭৩ ভরি রুপা ও চোরাই কাজে ব্যবহৃত ১টি গ্রান্ডার মেশিন (তালা কাটার মেশিন)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে তারা আর্থিক সংকট এবং লোভে পড়ে এই চুরির ঘটনাটি ঘটায়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) আরিফ হোসেন ও পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি সন্তোষ চাকমা।
চুরির ঘটনার বিবরণে ওসি সন্তোষ জানান, বহদ্দারহাট মোড়স্থ ইলিজি স্কাই পার্ক মার্কেটের ৬ষ্ঠ তলায় দোকান নং-৫১৮ “এ্যাপেল ক্ল্যাসিক” নামের দোকানের মালিক মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন(২৫), পার্শ্ববর্তী দোকানদার মো. কায়ছার উদ্দিন (২৮) ও উত্তম কর্মকার (৪০) তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে চুরির অভিযোগ করেন। এতে ওই মার্কেটের তিন নিরাপত্তা প্রহরীকেই আসামি করা হয়।
অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, গত ২৫ ডিসেম্বর বোরহান উদ্দিন সকাল বেলা ১২টার দিকে দোকানে এসে দেখতে পান তার দোকান থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের মোট ২৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন ও দোকানের ক্যাশ ড্রয়ারে থাকা নগদ অর্ধ লক্ষ টাকা চুরি হয়।
ঠিক একই সময়ে পাশের দোকানদার মো. কায়ছার উদ্দিন (২৮)র ‘কে.এস মোবাইল এন্ড গ্যাজেড ক্লাব-ভিভো-শো-রুম’ থেকেও বিভিন্ন ব্রান্ডের ৩৫টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, এক লক্ষ টাকা মূল্যের ৫টি লাইফ ডামী এবং দোকানের ক্যাশ ড্রয়ারে থাকা নগদ ২৪ হাজার টাকা চুরি যায়।
তাছাড়া একই মার্কেটের উত্তম কর্মকার (৪০)র স্কাই জুয়েলার্স নামক দোকান থেকে ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ২৪ ভরি ১৫ আনা ওজনের স্বর্ণালংকার, ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ২৫০ ভরি রুপা চুরি করে নিয়ে গেছে ওই তিন নিরাপত্তা প্রহরী।
তাদের অভিযোগের সূত্র ধরে মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজনকে সনাক্তের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় টিম পাঁচলাইশ।
দোকান মালিকদের দায়ের করা অভিযোগে আটক তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে জানালেন ওসি সন্তোষ চাকমা।
জেএন/রাজীব