ভাল-মন্দ আর সুখ-দুঃখ সাথে নিয়ে বিদায় নেবে ২০২৩। কি পেল আর কি হারাল এসব নিয়েই অনেকে হিসেব নিকেশে ব্যস্ত। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বছরের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর যেন স্মৃতিময় দিন হয়ে উঠল চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যদের।
এদিন বার্ষিক বনভোজন ও মিলনমেলার আয়োজন করে পেশাদারিত্ব সাংবাদিক সংগঠনটি। দিনভর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা, হাসি, আড্ডা ও আনন্দ আয়োজনে কোনটিরই কমতি ছিলো না এ আয়োজনে।
ফোরামের ৮৪ জন সদস্যসহ প্রায় শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী এ আনন্দ আয়োজনে শরীক হতে রবিবার ভোর থেকেই একে একে মিলিত হয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টলীস্থ নিরিবিলি রিসোর্টস এন্ড পর্যটনকেন্দ্রের নিরূপমা রিসোর্টসে।
ফোরামের সভাপতি কাজী আবুল মনসুরের নেতৃত্বে ব্যাতিক্রমধর্মী এ আয়োজনে আগত সাংবাদিক ও অতিথিদের রজনী গন্ধা ফুল ও নাস্তার প্যাকেট সাথে চকলেটসহ হাতে তুলে দিয়ে জমকালো আয়োজনের শুভ সূচনা করেন বনভোজন ও মিলনমেলার অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যরা।
এরপর ঘন্টা দুয়েক ধরে চলে একে অপরের সাথে খুনশুটি, ঠাট্টা, হাসি ও প্রিয় সহকর্মীদের নিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো আর মোবাইলের গ্যালারিতে আটকে রাখার পর্ব।
বেলা ১১টার দিকে ফোরামের নির্বাহী সদস্য ও বনভোজন কমটির সদস্য সচিব কামাল পারভেজ’র সঞ্চালনায় শুরু হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা।
বক্তব্য রাখেন, ফোরাম সভাপতি ও প্রতিদিনের সংবাদের ডেপুটি এডিটর কাজী আবুল মনসুর, সহ সভাপতি সি-প্লাসের সম্পাদক আলমগীর অপু, সাধারন সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক আলিউর রহমান, সহ-সম্পাদক গোলাম মাওলা মুরাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এটিএন নিউজের মনিরুল পারভেজ, ক্রীড়া সম্পাদক সাইফুল্লাহ চৌধুরী, সমাজসেবা সম্পাদক ও বনভোজন কমিটির আহবায়ক বাংলা টিভির ব্যুরো প্রধান লোকমান চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও ফোরামের কোষাধ্যক্ষ আইয়ুব আলী, ফোরামের নির্বাহী সদস্য মোহনা টিভির ব্যুরো প্রধান আলী আহমেদ শাহিন, সিনিয়র সাংবাদিক জুবায়ের সিদ্দিকী, বনভোজন রেজিস্ট্রেশন কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ রানা, অভ্যর্থনা কমিটির আহবায়ক নুর উদ্দিন সাগর, সদস্য রাজিব চক্রবর্তি ও মুকুল মাহি।
আলোচনা সভা চলাকালীন ‘টিআইবি পুরস্কার’ অর্জনের জন্য একুশে পত্রিকার সাংবাদিক, ফোরাম সদস্য শরীফুল ইসলাম রুকনকে অভিনন্দন ও সম্মামনা প্রদান করা হয়।
ফোরাম সভাপতি কাজী আবুল মনসুর তারঁ বক্তৃতায় বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম এ পর্যায়ে এসেছে। শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ধীরে ধীরে চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের কলেবর বাড়ছে।
প্রতি বছর আনন্দ আয়োজনের আয়োজন করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা সারা বছর ব্যস্ত থাকেন। বছরের একটা দিন ফোরামের সদস্যরা এভাবে আনন্দে মেতে উঠবে।
তিনি রিপোর্টারদের পেশাগত উন্নয়নের লক্ষে ফোরাম সাংবাদিকদের কর্মশালাসহ নানা আয়োজন করারও ঘোষণা দেন। একই সাথে চট্টগ্রামের ভাষা ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ফোরামের সকল সদস্যদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবার কথাও জানান তিনি।
বর্তমানে বিশ্বে ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিকতা বাড়ছে উল্লেখ করে সভাপতি বলেন, এখন ডিজিটাল প্লাটফর্মের যুগ। বিশ্বে সাংবাদিকতার উপর বড় বড় অনেক পুরস্কার ফ্রী-ল্যান্স সাংবাদিকরা পান।
সাংবাদিকতার গন্ডী এখন অনেক বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে গেছে। এটি এখন আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তিনি ফোরামের সকল সাংবাদিকদের লেখালেখির উপর আরো জোর দিতে বলেন।
এ মিলনমেলায় টিআইবি পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম আজ আমাকে যে সম্মান দেখালো তাতে আমার লেখালেখির উৎসাহ আরো বেড়ে যাবে।
ফোরামের সভাপতি কাজী আবুল মনসুরের কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে সুদুর গ্রাম থেকে এনে হাতে কলমে সাংবাদিকতা করতে সাহস জুগিয়েছেন।
আমাকে আলোকিত বাংলাদেশ ও প্রতিদিনের সংবাদে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে আমি এতদুর আসতে পেরেছি। আজকে টিআইবি’ পুরস্কার প্রাপ্তির পেছনে ওনার অবদান আমি কোনদিন ভুলব না।
ফোরামের সাধারন সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম ধীরে ধীরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কলম সৈনিকদের একটি আস্তার জায়গা করে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, কাজী আবুল মনসুর চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের আইকন। তিনি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওনার হাত ধরে অনেকে সাংবাদিকতা জগতে এসেছে। ফোরাম গঠন করার পর থেকে নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সব সমস্যাকে দুরে ঠেলে ফোরাম এগিয়ে যাচ্ছে।
আগামীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাথে ফোরাম যৌথভাবে কাজ করবে। সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়নের দিকে ফোরাম নজর দেবে।
আয়োজন কমিটির আহবায়ক লোকমান চৌধুরী বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এ আয়োজনটি করতে হয়েছে। হয়ত নানা ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। তিনি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে সবকিছু দেখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানান।
আলোচনা পর্ব শেষ। এবার খাওয়া-দাওয়ার পালা। ঘড়ির কাটায় তখন ১টা। একদিকে চলছে খ্যাতিমান শিল্পীদের মধুর কণ্ঠে সংগীতানুষ্ঠান, অন্যদিকে হাত ধুয়ে দল বেঁধে খাবার টেবিলের দিকে ছুটে চলা। সে এক অন্যরকম দৃশ্য।
এরপর বিফ-ননবিফ ভাগ হয়ে বসে পড়ে সবাই টেবিলে। শুরু হয় খাবার পরিবেশন। মাটির শানকি (বাসনে) বনভোজন পর্ব শুরু। টাটকা সামুদ্রিক রুপ চাঁন্দা মাছ ফ্রাই, ডিমকারী, মেজবানী গোস্ত ও খাসি এবং মেজবানী ডাল দিয়ে কব্জি ডুবিয়ে তৃপ্তিভরে খেলো আনন্দ আয়োজনে আগত সবাই।
এরপর ২টা থেকে টানা তিনঘন্টা নাচাগানা পর্ব। বয়স ছাপিয়ে তরুণ যোবাদের মতো গানের তালে তালে গতিময় নাচ যেমন ছিলো উপভোগ্য, তেমন ছিলো দর্শনীয়। এদিন যেনো সবাই হারিয়ে গেছে কৈশোর, তারুণ্যে।
সারাবছর গম্ভীর ব্যস্ত বাগিশ গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রাণোচ্ছল অংশগ্রহণে মিলন মেলাটি রূপ নিয়েছিলো প্রাণের সম্মিলনে।
সবশেষে দিনভর বর্ণাঢ্য আয়োজনের সমাপ্তি ঘটান ফোরামের সহ সভাপতি সাংবাদিক আলমগীর অপু। যারা এ আয়োজনে অংশ নিয়েছেন তাদের সবাইকে তিনি অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়। বলেন, ফোরামের জন্য পার্ক কমিটি একদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে দিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
তিনি পার্কের ব্যবস্থাপনা কমিটি, আয়োজক কমিটি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসা শিল্পীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
তবে খাবার নাচ গানে সীমাবদ্ধ থাকেনি চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের বর্ণিল এ আয়োজন। যাবার সময় অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যের হাতে দিলো দুটি প্যাকেট। যেখানে ছিলো আকর্ষনীয় সব উপহার।
স্মৃতিময় এমন অনিন্দ্য সুন্দর আয়োজন গণমাধ্যমকর্মীদের হৃদয়ে তাজা থাকবে বহুযুগ, বহুকাল। ফোরামের সদস্যদের জন্য ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর হয়ে থাকবে পুরো বছরের জন্য স্মৃতিময় একটি দিন।
জেএন/রাজীব