বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলটির জয়ের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে বিবিসি, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়। এরপর নির্ধারিত বিরতি শেষে শুরু হয় গণনা। বেসরকারিভাবে পাওয়া ২৯৮ আসনের ফলাফলে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৩ আসন।
আর আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের হার এবার বেশি। তারা ৬২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর অন্যান্য দল পেয়েছে দুটি আসন।
‘বাংলাদেশে ভোটাভুটি বিতর্কের মধ্যে পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হয়েছেন শেখ হাসিনা’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। শেখ হাসিনা নির্বাচনে তার পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতা নিশ্চিত করেছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, চমক করা বিষয় হলো দ্বিতীয় কে এসেছে। নির্বাচনে দ্বিতীয় অবস্থানে কোনো রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে ৬৩টি আসন পেয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এর ফলে সংসদে বিরোধী দল খুঁজে পেতে সমস্যা তৈরি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আল জাজিরা। কারণ বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ১১টি আসন পেতে সক্ষম হয়েছে।
এক প্রতিবেদনে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরিহার করা নির্বাচনে শাসনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনটি বিরোধীরা বয়কট করেছে এবং বেশিরভাগ ভোটারই অংশ নেয়নি। এই জয়ের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে থাকা নারী সরকার প্রধান হিসেবে তার খেতাব বজায় রেখেছেন শেখ হাসিনা।
‘বাংলাদেশের নির্বাচন: বিতর্কিত ভোটে চতুর্থবারের মতো জয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, আরও পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করবেন শেখ হাসিনা। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচন বর্জন করায় হাসিনার দল এবং মিত্ররা জয়ী হবে বলে আগে থেকেই আশা করা হচ্ছিল।
বিবিসি জানিয়েছে, বিএনপি এই নির্বাচনকে বানোয়াট বলে অভিযোগ করেছে। সরকারী পরিসংখ্যান প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতির কথা বলেছে। তবে সমালোচকরা বলছেন যে, এই সংখ্যাগুলো অনেক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটেনের শক্তিশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে জয়ী হয়েছেন’ শিরোনামে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করেছে। নির্বাচনে ৪০ শতাংশ মতো ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
এএফপির বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার পঞ্চম মেয়াদে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। তবে তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধীদের দমন পীড়নের অভিযোগ রয়েছে।
‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশিতভাবে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হয়েছেন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ নির্বাচনে তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সাথে প্রত্যাশা অনুযায়ী টানা চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরের ক্ষমতায় অর্থনীতি এবং বিশাল গার্মেন্টস শিল্পকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব পেয়েছেন। এছাড়া প্রতিবেশী মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
জাপানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিরোধী দলের বয়কট, কারচুপি, সহিংস ঘটনা একতরফা এবং কম ভোটার উপস্থিতির অভিযোগের মধ্যে নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন যে- প্রায় ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ভোট প্রয়োগ করেছেন। এটি ২০১৮ সালের (৮০ শতাংশ) তুলনায় অনেক কম। তবে সরকার আগের নির্বাচনগুলোতে কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে। প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
এছাড়াও বিশ্বের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই বাংলাদেশের নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
জেএন/পিআর