গেল ২০২২ সালে জাতীয় পত্রিকায় এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি সার্কুলার পেয়ে বেশ খুশী হয়েছিলেন এস এম আব্দুর নূর তানিম নামে এক শিক্ষার্থী। আবেদনও করেন সেবছর।
আবেদনের কপি সংগ্রহ করে ভর্তিচ্ছু এস এম আব্দুর নূর তানিমকে ফোন করেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাবেদ আবছার চৌধুরী। সে ফোনটিই যে তার কপালে দুর্দশা ডেকে আনবে তা কখনোই কল্পনা করেনি তানিম।
জাবেদ আবছার তানিমকে ফোন করে জানান, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে এমবিবিএস কোর্সে পড়তে হলে ২৮ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীদের ‘বিশেষ ক্যাটাগরি’-‘গরিব কোটা’য় ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জাবেদ।
এরপরও কম করে হলেও ১০ লক্ষ টাকাতো লাগবে। তবে তানিমের পরিবার এত টাকা খরচ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত ৭ লাখ টাকায় এমবিবিএসে ভর্তি হতে রাজি হন।
ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্রাদি ও সকল মূল সনদসহ শর্তমত চার দফায় এই টাকা প্রদান করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর আপন চাচা এস, এম ফরিদ।
দাবিকৃত পুরো অর্থ জাবেদকে প্রদান করা হলেও শিক্ষার্থী তামিমকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি জাবেদ আবছার চৌধুরী। বরঞ্চ ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর শিক্ষা সনদ তার কাছে আটকে রেখে নানানভাবে হয়রানি করছেন। প্রতারণার শিকার হয়ে ভাতিজা তানিমের জীবন থেকে নষ্ট হয়ে গেছে একটি শিক্ষাবর্ষ।
গেল মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রশাসনের কাছে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ এলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
লিখিত অভিযোগে এস এম ফরিদ উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট জাবেদ আবছার চৌধুরী তার ভাতিজাকে বিশেষ কৌঠায় এমবিবিএস কোর্সে পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এজন্য ৭ লাখ টাকা তাকে দিতে হয়। গেল ২০২২ সালের ১০ আগষ্ট প্রথম দফায় চকবাজারস্থ একটি রেষ্টুরেন্টে বসে দুই লাখ টাকা এবং বিভিন্ন কাগজপত্রাদি ও সকল মূল সনদ মো. জাবেদ আবছার চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করি।
এরপর তার হোয়াটসআপ থেকে তারই বড় ভাই আকবর আবছার চৌধুরীর ইসলামি ব্যাক, চকাবাজার শাখার একটি একাউন্ট নং (যাহার নং ২০৫০১৬২০২০৪৮৩৫১১৮) নিয়ে ওই বছরের ৪ অক্টোবর আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা করি।
দুদিন পর ৬ অক্টোবর ৩য় দফায় ২ লাখ টাকা ওই হিসেব নম্বরে জমা করি। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর কথামতো ৭ লাখ টাকার সর্বশেষ কিস্তি দেড় লক্ষ টাকা চন্দনপুরার বাসভবনে গিয়ে জাবেদ আবছার চৌধুরীর হাতে দিয়ে আসি।
এভাবে শর্তমতো চার দফায় সর্বমোট ৭ লাখ টাকা প্রদান করার পরও জাবেদ আবছার আমার ভাতিজাকে ভর্তি করাতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলে অদ্যবধী সময়ের কালক্ষেপণ করতে থাকে। এমনকি ভাতিজার মূল সনদপত্রগুলোও ফেরত দিতে গড়িমসি শুরু করে।
ভর্তি করাতে না পারার কারণে এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা কথা কাটাকাটি হয় দুই পক্ষের মধ্যে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া হলে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ভাতিজার মূল সনদগুলো ফেরত দেন। তবে এর আগেই উক্ত মাসেই এমবিবিএস কোর্সের ভর্তির সময় শেষ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত ভূক্তভোগীর টাকা ফেরত দিতে রাজি হন জাবেদ আবছার। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ (এক লাখ) টাকা একাউন্টে ফেরত দেন। ২য় পর্যায়ে একই বছর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বিকাশ একাউন্টে (০১৭৯০৫৪৫১৩১) ৯১ হাজার (একানব্বই হাজার) টাকা প্রদান করেন। বাকি টাকা ফেরত চাইলে মুঠোফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে ভয়-ভীতিসহ হুমকি প্রদান করেন।
ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়টি নিয়ে এতদিন মুখ খুলেননি কেন জানতে চাইলে ভুক্তভোগীর চাচা এস এম ফরিদ বলেন, জাবেদ আবছার চৌধুরী বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমার ভাতিজা যে মেডিকেল বা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হোক তাকে সেখান থেকে বের করে দিবে। ভাতিজার ভবিষ্যত চিন্তা করে তারা অভিযোগ করতে একটু দেরী হয়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তামিমের চাচা এসএম ফরিদ আরও বলেন, মেধাবী হওয়া সত্বেও ছেলেকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে না পারা এবং প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে জাবেদ আবছার চৌধুরী সাত লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কারণে আমার বড়ভাই হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান।
এদিকে জাবেদ আবছার চৌধুরীর এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিবাণিজ্যকাণ্ডের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রসিডেন্ট ডা. মো. মোরশেদ বলেন, সরকারি রুলস’র বাহিরে গিয়ে কাউকে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং বিশেষ কোটায় ভর্তি করানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেএন/পিআর