সারা দেশে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপহরণের শিকার ৬৭৭ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময়ে গ্রেপ্তার হয়েছে ৬৯৯ জন অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল র্যাব সদর দপ্তর সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।
সর্বশেষ গত বুধবার রাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিমেলকে অপহরণকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, যখন যেখানেই মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে, নির্যাতন অথবা অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, র্যাব অভিযান চালিয়ে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছে। অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃতদের।
অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদেরও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
র্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এ পর্যন্ত অপহরণের শিকার এক হাজার ৪৮৩ জন পুরুষ, এক হাজার ৪২৬ জন নারী, ৭০৮ শিশুসহ সর্বমোট তিন হাজার ৬১৬ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র বলছে, গত এক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় সংক্রান্ত ৭৭টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বেশির ভাগ আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কারো সন্তান যেন অপহরণ না হয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইইউবিএটির ছাত্র হিমেলকে উদ্ধারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার র্যাবের কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত হিমেলের মা তহুরা বিনতে হক বলেন, ‘কারো ভাগ্যে যেন সন্তান অপহরণের ঘটনা না ঘটে। আমি বোঝাতে পারব না, একজন মায়ের পক্ষে এটা সহ্য করা সম্ভব কি না। যারা আমার ছেলেকে অপহরণ, নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারা নির্যাতন করে আমার ছেলের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখনো জানি না আমার ছেলেটা কী করবে। ও এখনো অসুস্থ। আমার দাবি হলো, ওদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। বলতে তো পারছি না, শুধু মনে হয়, ওদের দুনিয়াতে না রাখাই ভালো। ২৪ ঘণ্টা গালাগালি, হুমকি দিয়েছে। এখনো ভয় লাগে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে যেন না যাই সে জন্য হুমকি দিত। বলত যে ছেলেকে মেরে ফেলবে। বারবার ওকে জবাই করার হুমকি দিচ্ছিল। এদের সঙ্গে আমাদের গাড়িচালক সামিদুলও ছিল। কোথায় যেতে হবে জানতে চাইলে ওরা জানায় ময়মনসিংহে। সেখানে টাকা নিয়ে এসে ছেলেকে নিয়ে যেতে হবে। কান্না, চিৎকার, মারামারি, গালাগালির শব্দ শোনানো হয়। নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। একমাত্র সন্তান, কী করব ভেবে কূল পাই না। তবে ডিবি পুলিশ ও র্যাব অনেক সহযোগিতা করেছে।’
চালক যে হিমেল অপহরণের ঘটনায় জড়িত, সেটা কি এখন বুঝতে পারছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপহরণের ১০ থেকে ১২ দিন আগে থেকে সামিদুলের মতিগতি ভালো ছিল না। শুধু ছেলেকে নিয়ে বাইরে যেতে চাইত। কিন্তু কখনো আমার ছেলেও ওকে সন্দেহ করেনি।’
এসএ