যাত্রা শুরু করলো জয়টিভি টকশো। চট্টগ্রামভিত্তিক কোন অনলাইন সংবাদ সংস্থার এটিই প্রথম ভিন্নধর্মী প্রামাণ্যনুষ্ঠান। যা প্রথাগত স্টেজ ও স্টুডিও আয়োজনের বাইরে দর্শক-শ্রোতাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ‘টকশো’ হিসেবে প্রচারিত হবে। বর্তমানে রাজনীতির মাঠে ভোটের মৌসুমে টকশো’র প্রতি বাড়তি আগ্রহের কারণে এই পথচলা শুরু। ভোট ছাড়াও নানান বিষয়ে এই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে।
জয়নিউজের উদ্বোধনের মাত্র দুই মাসের মাথায় অনলাইন নিউজ ওয়েবপোর্টালের সমান্তরাল চালু হলো জয়টিভির এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। দর্শক-শ্রোতাদের প্রত্যাশা ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে এই অনুষ্ঠানের মূল পরিকল্পনা করেন সম্পাদক অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন)।
২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জামালখান মোড়ের ইতিহাসভিত্তিক মূর্যালকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে প্রথম পর্বটি ধারণ ও সম্প্রচার সম্পন্ন হয়েছে। জয়টিভির প্রতিবেদক পার্থ প্রতীম নন্দীর সঞ্চালনায় এতে অতিথি হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহিম এবং জামালখান ওয়ার্ডের চসিক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
পথচলতি ভিন্নধর্মী এই টকশোতে উঠে আসে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তরুণ সমাজের প্রত্যাশা ও দাবি দাওয়া। এতে চবি শিক্ষক মহিউদ্দিন মাহিম মূলত শিক্ষা-গবেষণা ও জাতীয় পর্যায়ে আগামী সরকারের প্রতি তরুণ শিক্ষক-গবেষকদের ভাবনা তুলে ধরেন। শৈবাল দাশ সুমন বলেন নতুন নেতৃত্বের গুণগত মানের বিষয়টি।
বিকেল চারটায় শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠান ধারণ করার সময় জনপ্রত্যাশা ও দর্শক শ্রোতাদের ব্যাপক আগ্রহ খেয়াল করা যায়। উৎসুক অনেক পথচারী টকশো টিমকে বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশ্ন করে তাদের জয়টিভির প্রতি তাঁদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠান শুটিং করার সময় জামালখান মোড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে জয়টিভির এই ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানটি। অনেক দর্শক-শ্রোতাকে তখন বলতে শোনা যায়, সাজানো গোছানো স্টুডি নয়, জনতার কাতারে এই অনুষ্ঠানগুলো হওয়া দরকার।
অফিস ফেরত ব্যাংক কর্মকর্তা হায়দার আলী বলেন, ‘এটা একদম ন্যাচারাল শুটিং। এভাবে যদি আপনারা মাঠে নেমে যান তবেই মানুষের কথাগুলো শুনতে পারবেন’। বৈকালিক হাঁটাচলায় বের হওয়া মধ্যবয়স্ক প্রীতিময় ঘোষ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আগ্রহ নিয়ে জয়টিভির এই অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। তাঁর মনোভাব জানতে চাইলে বলেন, ‘এগুলো খুব ভালো কাজ। আমরা আমাদের মনের কথাগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো। জয়টিভি এখন আমাদের ঘরের দরজায় চলে আসলো।’
নয় সদস্যের এই টকশো প্রডাকশন টিমের সমন্বয় করবেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও জয়নিউজের পরামর্শ সম্পাদক রাজীব নন্দী। অনলাইন সংবাদ সংস্থা জয়নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব পার্থ ও নির্বাহী সম্পাদক বিশ্বজিত বণিক দ্বৈতভাবে এই অনুষ্ঠানের কোঅর্ডিরেটর হিসেবে আছেন। টকশো সঞ্চালনায় থাকবেন জয়টিভির কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজের পরিচিত মুখ নাজিম উদ্দিন শ্যামল, জয়টিভির প্রতিবেদক পার্থ প্রতীম নন্দী ও চিফ প্রমোশনাল অফিসার সিজ্জিল মমতাজ। এডিটিং ও ক্যামেরা অপারেশন টিমে রয়েছেন যথাক্রমে ইমরুল হায়দার সুমন এবং তৌহিদুল ইসলাম। প্রোডাকশন বয় যথাক্রমে জাবেদ আলী ও দীপু বড়ুয়া।
এর আগে চট্টগ্রামের মেথরপট্টিতে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমাজের নিম্নবর্গের দলিত জনগোষ্ঠির ভাবনা উঠে আসে নিরীক্ষাধর্মী একটি টকশোতে। এছাড়াও ভারতের প্রখ্যাত আনন্দবাজার পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে দুই বাংলার আন্ত:সম্পর্ক নিয়েও অনুষ্ঠিত হয় একটি নিরীক্ষাধর্মী টকশো। নিরীক্ষাধর্মী সফল সম্প্রচারের পর জয়টিভি এখন ধারাবাহিকভাবে এই আয়োজন করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে টকশো একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। টকশো শেষে সোস্যাল মিডিয়াসহ চায়ের দোকানে, আড্ডার টেবিলে দর্শকদের মাঝে সেই টকশো নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দর্শকদের আলোচ্য বিষয় থাকে টকশোতে কে কতটুকু যোগ্যতার প্রদর্শন করতে পেরেছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কে বেশি সিদ্ধহস্ত । গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিনির্মাণে বা রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক আবহ শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে টকশোর ভূমিকা আছে। অনেক সময় টেলিভিশন টকশোকে ‘বিকল্প পার্লামেন্ট’ বলেও অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের বল্গাহীন আলোচনাকে উদ্দেশ করে এবং টকশোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘টিভির টকশো খুবই ‘টক’। আগে জানতাম মানুষ মধ্যরাতে জাগে সিঁদকাটার জন্য। এখন রাতজাগে আমাদের গলাকাটার জন্য। তারা রাতজেগে টকশোর নামে জাতিকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে।’’ জয়টিভি এই ধারণা ভুল প্রমাণ করবে। জয় টিভিতে সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার আয়োজন করবে। যেখানে উঠে আসবে প্রান্তিক মানুষের বিভিন্ন দাবি, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা । দর্শকরাও সরাসরি অংশ নিতে পারবেন এতে। চট্টগ্রামে জয়টিভির পক্ষ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেকোনদিন বসবে এই টকশো’র আসর। ভবিষ্যতে দর্শক-শ্রোতাদেরও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকবে এতে। অতিথি আমন্ত্রণ ও বিষয় নির্বাচনে জয়টিভি সবসময় তরুণ, পেশাজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কণ্ঠস্বরকে ধারণ করে এই ভিন্নধর্মী যাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।