চট্টগ্রাম নগরীর বাসা-বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা বেড়েছে। দেড় মাসের ব্যবধানে নগরের পাঁচলাইশ ও চকবাজার থানা এলাকায় স্বর্ণ চুরির বড় দুটি ঘটনা ঘটেছে। দুটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে চুরি হয়েছে অন্তত ২২৩ ভরি স্বর্ণালংকার। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজার থানার আমিরবাগ আবাসিকের এস আর হাউজ নামের একটি বাড়ির বেলকনির গ্রিল কেটে দুর্বৃত্তরা চুরি করেছে ১২৩ ভরি স্বর্ণালংকার।
এ ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা হলেও গত এক সপ্তাহেও দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
চকবাজার থানার ওসি মো. ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, এস আর হাউজ থেকে ১২৩ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনার তদন্ত চলছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। শিগগির একটা ফলাফল পাওয়া যাবে।
এর আগে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানাধীন ‘ফিনলে স্কয়ার’ ভবনে আবদুল কাদের নামে এক দুবাই প্রবাসীর ফ্ল্যাট থেকে চুরি হয় ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার। ঘটনার ১৫ দিন পর ৩ জানুয়ারি এক নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের হেফাজত থেকে ৩৪ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।
মহানগর ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার সাদিরা খাতুন বলেন, ‘চুরির এই ঘটনায় আরেকজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’
১২৩ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির বিষয়ে আমিরবাগ এলাকার এস আর হাউজের মালিক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সারওয়ার আলম জানান, ঘটনার রাতে তিনি বাসায় ছিলেন একা। তার স্ত্রী ছিলেন রাঙ্গামাটিতে। চুরি হওয়া স্বর্ণালংকারগুলোর মালিক তারা পাঁচ ভাই-বোন। এই ব্যবসায়ীর দাবি, ঘটনার রাতে বেলকনির গ্রিল কেটে ১৩০ থেকে ১৪০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে চম্পট দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন। চুরি হওয়া স্বর্ণালংকারের দাম আনুমানিক ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
নগরের কাতালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ফারহান উদ্দিন বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুয়ায়ী সম্প্রতি চট্টগ্রাম শহরে বাসা থেকে স্বর্ণ চুরির বড় দুটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। এসব অপরাধ আমাদের ভাবাচ্ছে।’
শুধু বাসা-বাড়িতে নয়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের শহরের বিভিন্ন দোকান থেকেও সোনা চুরির একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর বলেন, ‘দিন দিন সোনার দাম বাড়ছে। চুরি-ডাকাতিও বেড়েছে। পাশাপাশি স্বর্ণ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনাও ঘটছে।’ তিনি মনে করেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরে চোর বা ডাকাতকে শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা গেলে অপরাধ কমে যাবে।
এই ব্যবসায়ী বলেন, গত এক বছরে চট্টগ্রামে দুজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে সিলেটে একসঙ্গে পাঁচটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় জড়িতরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। অবশ্য কোনো কোনো ঘটনার কিনারা করছে পুলিশ। অপরাধীরা গ্রেপ্তার হয়েছে। তারপরও তারা উদ্বিগ্ন।
জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নগরের হাজারী লেন মিয়া শপিং কমপ্লেক্সের দোতলায় পলাশ বণিক নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকানের ড্রয়ারের তালা ভেঙে সাড়ে ৭ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরি করে দুর্বৃত্তরা। অবশ্য এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনার সাত দিনের মাথায় গত ২ ফেব্রুয়ারি নগরের ইপিজেড ও কক্সবাজারের মহেশখালী এলাকা থেকে নরেন ধর বাবু (২৬), আরিফ হোসেন (২৫) এবং কানু পাল কিশোর (৩২) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের হেফাজত থেকে চুরি করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ওসি এম ওবায়েদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেএন/এমআর