শিরীষতলায় বই মেলার উদ্বোধন

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম নগরের ফুসফুস খ্যাত নৈসর্গিক সিআরবির শিরীষতলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে আয়োজিত অমর একুশে বই মেলার উদ্বোধন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

- Advertisement -

আজ শুক্রবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল বলেন, একুশ আমাদের চেতনার উৎস। একুশের চেতনাকে ধারণা করে আমরা এগিয়ে যাব এ হোক আমাদের শপথ।’

- Advertisement -google news follower

মেয়র বলেন, এবার সিআরবির শিরিষতলায় বইমেলার আয়োজন করেছে সিটি করপোরেশন। প্রকৃতি অপরুপভাবে সাজিয়েছে এ সিআরবিকে। বইমেলা এর আগে অনেক জায়গায় হয়েছে। লালদিঘীর মাঠ, মুসলিম হল ও সর্বশেষ জিমনেশিয়াম মাঠে। এবার জিমনেশিয়ামে করা যায়নি।’

‘অনেকে প্রস্তাব দিয়েছেন কাজির দেউড়ি যে শিশুপার্ক ভেঙে ফেলা হয়েছে সেখানে করতে। আমি তখন প্রস্তাব দিয়েছিলাম সিআরবিতে করতে। অনেকে নাখোশ হয়েছিলেন। কিন্তু আজ এ সমাগম দেখে নাখোশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

- Advertisement -islamibank

পাঠকদের বই মেলায় আসার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, পাঠকরা মেলায় আসুন৷ আপনাদের নতুন প্রজন্মকেও নিয়ে আসুন৷ মাদকমুক্ত, সঙ্কীর্ণতামুক্ত সমাজ গড়তে শিশুদের হাতে বই তুলে দিন৷

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, বইমেলার সাথে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য জড়িত৷ বই মেলাকে সফল করতে মেলার নিরাপত্তার জন্য আমরা সচেষ্ট থাকব।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বই মেলার উপযোগী কোন খাস জমি পাওয়া গেলে সেখানে বই মেলাসহ বিভিন্ন আয়োজনের জন্য স্থায়ীভাবে ইনশাল্লাহ বরাদ্দ পাওয়া যাবে৷

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম মেলার আয়োজন করায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান৷

অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহাম্মদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, চসিকের শিক্ষা স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুসহ কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমসহ বিভাগ ও শাখা প্রধানবৃন্দ এবং চসিকের উপ-সচিব আশেকে রসুল টিপু, সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস উপস্থিত ছিলেন৷

এবারের আয়োজনের ২৩ দিনজুড়ে রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লোক উৎসব, মরমি উৎসব, বসন্ত উৎসব, তারুণ্যের উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, শিশু উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, নারী উৎসব, চাটগাঁ উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কবিতা আবৃত্তি ও ছড়া উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, কুইজ প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, গুণিজন সংবর্ধনা, সম্মাননা পদক এবং সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।

মেলায় সংগ্রামে-আন্দোলনে আলোকচিত্র সংকলন
‘গৌরবগাথায় শেখ হাসিনা’’ এবং ‘৬৯ থেকে ৭১’ দুটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়৷

বইমেলা প্রথমদিনেই জমে উঠেছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের ভীড়ে যেন মুখর ছিল বইমেলা। ছুটির দিন হওয়ায় প্রাণের মেলা-বইয়ের মেলা পরিণত হয় যেন মানুষের মেলায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বইমেলাকে কেন্দ্র করে উৎসব আমেজে সেজেছে নান্দনিক সিআরবি এলাকা। মেলায় ঢুকতে হাতের বামে সড়কের একপাশে রয়েছে চসিকের তত্ত্বাবধানে, নগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহযোগিতায় ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী।

মেলায় শিশু কর্নারে বিভিন্ন রাইড, মুখরোচক খাবারের স্টল, মৃৎশিল্প সামগ্রীর স্টল ছিল জমজমাট। কিছু স্টলের কাজ এখনও চলছে। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, মেলায় যেসব প্রকাশনা আসার কথা ছিল প্রায়ই সবাই চলে এসেছে। কয়েকটি স্টলের কাজ শেষ না হওয়ায় তারা এখনও বই তুলতে পারেননি।

এদিকে বইমেলার পাশে খাবারের স্টল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন প্রকাশক ও লেখক।

চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনার প্রকাশক চৌধুরী ফাহাদ বলেন, ‘সিআরবির পরিবেশ ভালো। এখানে শান্তিপূর্ণ একটি ব্যাপার আছে। অনেকে সন্ধ্যা বেলা এখানে এমনেই ঘুরতে আসেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য এ জায়গাকে ফুসফুস বলা হয়। তবে বইমেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় প্রায়ই পরিবর্তন করতে হচ্ছে যেটা একজন লেখক, প্রকাশন বা পাঠক হিসেবে ইতিবাচক বলে আমি মনে করছি না।’

‘স্থায়ী হলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর এখানে বইমেলা হচ্ছে। কিন্তু তার পরিবেশ আছে বলে মনে হচ্ছে না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাউন্ডবক্সের আওয়াজ পাঠকদের মনকে বিঘ্নিত করছে।’

নন্দন বইঘরের স্বত্বাধিকারী সুব্রত ধর বলেন, ‘বারবার বইমেলার স্থান পরিবর্তন হলে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের একটু বিব্রত হতে হয়। এটা যদি স্থায়ীভবে সিআরবিতে করা যায় তাহলে সবার জন্য ভালো হয়।’

লেখিকা সাবিনা পারভীন লীনা বলেন, ‘মেলার আজ প্রথমদিন ও ছুটির দিন হিসেবে অনেক মানুষ এসেছে। কিছু দিন পার হলে অবস্থা বুঝা যাবে। সিআরবি বইমেলার জন্য একটি পারফেক্ট স্থান। তবে সাউন্ডবক্সের আওয়াজ বেশি থাকায় বইমেলার পরিবেশটা নষ্ট হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে।’

বইমেলায় বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবিহা তাবাসসুম রিয়া। তিনি বলেন, ‘কয়েকবছর ধরে বন্ধুদের সঙ্গে বইমেলায় আসছি। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে আসতাম। প্রতিবছর বইমেলা থেকে অনেক বই কেনা হয়। এবছরও কিনব। আজ বই দেখেছি। এখনও কিনিনি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহকারী প্রকৌশলী আবরার ফাহাদ বলেন, ‘বছরে একবার এ বইমেলা হয়। ছোটবেলা থেকেই আমার বই পড়ার নেশা। আজ ছুটির দিন। তাই বন্ধুদের নিয়ে বইমেলায় এসেছি। দুইটা কবিতার বই কিনেছি।’

এবারের বই মেলায় অংশ নিচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯২টি প্রকাশনা সংস্থা। সিআরবির ৪৩ হাজার বর্গফুট জুড়ে ১৫৫টি স্টলে সাজানো এ মেলা চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। এর মধ্যে ৭৮টি ডবল স্টল ও সিঙ্গেল স্টল ৭৭টি। এছাড়াও থাকছে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু কর্নার, লেখক আড্ডাসহ নারী কর্নার ও সেলফি কর্নার। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।

মেলায় প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে। এবার বইমেলা আয়োজনে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।

চট্টগ্রামে প্রতিবছর একুশে বইমেলার আয়োজন থাকলেও এবারই প্রথম সিআরবিতে হচ্ছে এ মেলা। খেলার মাঠে মেলার আয়োজন না করার নির্দেশনা থাকায় স্থান পরিবর্তন করতে হয়। তবে সিআরবির পরিবেশ নান্দনিক হওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতি বছর এখানেই বইমেলা করতে আগ্রহী সিটি করপোরেশন।

এদিকে বইমেলায় চন্দ্রবিন্দু, গল্পকার, প্রজ্ঞালোক, নালন্দা, শিশুপ্রকাশ, প্রতীক, আদিগন্ত, ভোরের কাগজ প্রকাশন, শিখা, সত্যয়ন, বাতিঘর, প্রথমা, অন্যধারা, সাহিত্য বিচিত্রা, মূর্ধন্য, লাবণ্য, তৃতীয় চোখ, আবির প্রকাশন, গলুই, বলাকা, খড়িমাটি, শব্দশিল্প, কাকলী, কালধারা, বিদ্যানন্দ, কথাপ্রকাশ, নন্দন, শৈলী প্রকাশন, বলাকা, ইতিহাসের খসড়া, রাদিয়া, নন্দন, ফুলকি, জ্ঞানকোষ, কিংবদন্তি, প্রথমা, দ্বিমত, সালফি, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, মাইজভাণ্ডারী প্রকাশন, আলোকধারা বুকস, লাল সবুজ,শালিক, কথাবিচিত্রা, কথা প্রকাশ, আফসার ব্রাদার্স, বাবুই, গাজী, কিডস পাবলিকেশন, হাওলাদার, ফুলঝুড়িসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে।

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM