আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডকে দূরে রাখলে টেস্ট ক্রিকেটে বাকি দশ দলের মধ্যে ৯ দলেরই আছে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুখস্মৃতি। আক্ষেপ ছিল কেবল বাংলাদেশেরই, এবার ঘুচলো সে আক্ষেপটাও। দশ নম্বর দল হিসেবে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মত ইনিংস ও ১৮৪ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
এ সিরিজ শুরু হওয়ার আগে ২০০৯ সালে শেষবার উইন্ডিজের সাথে সাদা পোশাকে জয়ের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর মাঝে চলে গেল আরও ৮টা টেস্ট, সাথে কেটে গেল ৯টা বছর, তবুও ধরা দিল না কাঙ্ক্ষিত সেই জয়টা। তবে জয়টা পাওয়া গেছে চলমান দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটাতে। যেটা উইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ছিল প্রথম টেস্ট জয়। এরপর স্বাগতিকরা অপেক্ষাতে ছিল ঢাকাতে ফিরেও জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার। মাহমুদউল্লাহ-মিরাজরা করে দেখালেন সেটাও।
সিরিজের শেষ টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের রীতিমত বিধ্বস্ত করে পাঁচ দিনের ম্যাচে মাত্র আড়াই দিনেই ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজটা নিজেদের করে নিল টাইগাররা। এই জয়ের ফলে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ১৩তম টেস্ট জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। একই সঙ্গে পাওয়া গেল চতুর্থ টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ।
ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রানের সাথে সাকিবের ৮০ ও অভিষিক্ত ওপেনার সাদমান ইসলামের ৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংসের কল্যাণে অলআউট হওয়ার আগে ৫০৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ দল।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি উইন্ডিজ। শুরুটা করলেন অধিনায়ক সাকিব নিজেই। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফেরালেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে। এরপর অ্যামব্রিসকে যখন নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান সাকিব, তখন ক্যারিবিয়ানদের দলীয় সংগ্রহ ১৭ রান। এরপর চলতে থাকে কেবলি মেহেদি হাসান মিরাজ শো। এই অফস্পিনার পর পর তুলে নেন ৩ উইকেট। সফরকারীরা ২৯ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর উইকেটে আসেন হেটমেয়ার আর ডাওরিচ, সামলাতে থাকেন স্বাগতিক স্পিনারদের। দিনশেষে আর কোন বিপদ হতে না দিয়ে ওই ৫ উইকেটের বিনিময়েই ৭৫ রান শেষ করেন দ্বিতীয় দিনের খেলা।
৪৬ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি নিয়ে হেটমায়ার ৩২ ও ডওরিচ ১৭ রানে অপরাজিত থেকে রোববার আবার শুরু করেছিলেন ম্যাচের তৃতীয় দিনের খেলা।
তবে সকালে আর তারা একদমই সুবিধা করতে পারেননি। আগের দিনের সাথে দলীয় ১১ রান যোগ হতেই ব্যক্তিগত ৩৯ রানে হেটমেয়ারকে ফেরান মিরাজ। এরপর একে একে বিশু (১), রোচ (১) ও ডওরিচকেও (৩৭) তুলে নেন মিরাজ। পরে লুইসকে সাকিব আউট করলে উইন্ডিজকে মাত্র ১১১ রানেই বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ। তাইতো প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানে পিছিয়ে থাকা ক্যারিবিয়ানদেরকে ফলোঅনে ফেলে টাইগাররা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলোঅনে ফেলল টাইগাররা।
ফলোঅনে পড়ে আবার ব্যাট করতে নেমেও সেই একই চিত্রনাট্যর পুনরাবৃত্তি উইন্ডিজের ইনিংসে। এবার শুরুর ২৯ রানে হারায় ৪ উইকেট। পরে ক্রিজে আসেন হেটমেয়ার, খেলতে থাকেন আক্রমণাত্মক। তবে অপরপ্রান্ত থেকে তাকে সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি তেমন কেউ। পরে হাত খুলে খেলা হেটমেয়ারও ফিরেছেন ব্যক্তিগত ৯৩ রান করে। এরপর আর কোন ব্যাটসম্যান প্রতিরোধ গড়তে না পারায় এবার ২১৩ রানে থামে উইন্ডিজের ইনিংস। ফলে ইনিংস ও ১৮৪ রানে ম্যাচ জিতে নিয়ে সিরিজটাও নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ দল।
টাইগারদের হয়ে বল হাতে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৫৮ রানে ৭ উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৯ রান ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মেহেদী মিরাজ। সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।