চট্টগ্রামে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে গণডাকাতির প্রস্তুতিকালে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৩০ জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
জব্দ করা হয়েছে গণডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ২টি ট্রলার। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বঙ্গোপসাগরে এই রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যু কর্তৃক ডাকাতির ঘটনায় অনেক জেলে হত্যার শিকার হন।
সে সময় আমাদের অভিযানের মুখে অনেক জলদস্যু গ্রেফতার হয়েছিল। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যাতে পরবর্তীতে সংঘটিত না হয়, সে জন্য আমরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছিলাম।
গোপন তথ্যে জানতে পারি, ৩০-৪০ জনের একটি গ্রুপ বঙ্গোপসাগরে গণডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সর্বশেষ ওই গ্রুপটির বিষয়ে রোববার রাতে আমরা জানতে পারি তাঁরা চট্টগ্রামে পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, রাত ১১টার দিকে গ্রুপটি ডাকাতির উদ্দেশ্যে পতেঙ্গা ঘাট থেকে ট্রলারে করে রওনা দিয়েছিল। গ্রুপটি যে ট্রলারে করে রওনা দিয়েছিল সেই দুটি ট্রলার আমরা চিহ্নিত করি।
পরে তাঁদেরকে পতেঙ্গা চ্যানেলের শেষ মাথা থেকে ট্রলারসহ আটক করতে সক্ষম হই। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র, পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় চাপাতি-রামদাসহ ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
তাদের ভাষ্যমতে, গত এক বছরে বাঁশখালী, চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বরিশালসহ অনেক এলাকায় বিভিন্ন সময় ডাকাতি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
এই গ্রুপটি ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি ট্রলার ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল। সিডিএমএস পর্যালোচনা করে দেখি, আটককৃতদের মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, করিম (৩৩), মো. রুবেল (৩৩), মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আব্দুুর রহিম (২৫), মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), শাজাহান বেগম (৩৭), মো. সাহাব উদ্দিন (৩৫), মো. শওকত (৩৭), মো. ইসমাইল (২৬), দেলোয়ার ইসলাম (৪২), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মো. মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০), মো. গিয়াস উদ্দিন (২৬), মো. কাছেদ (১৯), মো. আকিদ খান (৩৭), দিদারুল ইসলাম (৩৩), নাইম (১৯), হারুন (৪৪), ইয়াছিন (২৯), খলিলুর রহমান (২৫), ইকবাল হোসেন (২৪), শাহেদ (২২), হোসেন (২৭), আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০) এবং মো. সোলায়মান (৩৮)।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেফতার শাহেদ মাঝী প্রথম গ্রুপের দলনেতা। সে কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুসাঙ্গিক যে সকল সরঞ্জামাদি লাগতো সেগুলো সরবরাহ করা। তার দলে কাজ করতো ৯ জন।
গ্রেফতার আরেক আসামি ইউসুফ মাঝী ছিল দ্বিতীয় গ্রুপের নেতা। তিনিই ডাকাতির মূল পরিকল্পণাকারী। প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিবার্চন করত। ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির করত। ইউসুফ মাঝীর দলে ১১ জন ডাকাত সদস্য ছিল।
গ্রেফতার করিম মাঝী ছিল তৃতীয় ডাকাত গ্রুপের নেতা। তার কাজ ছিল ডাকাতির পরে লুট করা বোট, মাছ, জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে সুবিধামত বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা এবং সেই টাকা গ্রুপের সকল সদস্যকে সমানভাবে বন্টণ করা। তার দলে ১০ জন ডাকাত সদস্য ছিল। ডাকাত সর্দার ইউসুফ মাঝী এবং করমি মাঝীর নিজস্ব বোট ও কোম্পানী রয়েছে। যা দিয়ে তারা মাঝীর ছদ্মবেশে সমুদ্রে দস্যুতা করতো।
জেএন/পিআর