ভারতে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে কৃষক আন্দোলন। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টির জন্য আইনসহ একাধিক দাবি নিয়ে আবারও আন্দোলনে নেমেছেন ভারতের কৃষকরা।
দাবি আদায়ে মঙ্গলবার দিল্লি যাত্রার ডাক দিয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাজার হাজার কৃষক।
কৃষকদের দিল্লি চলো অভিযান ঠেকাতে সোমবার থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত ভারতের রাজধানীতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
এছাড়া একাধিক জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। রাজধানীতে সমাবেশ, মিছিল এবং রাস্তা-প্যাসেজ অবরোধ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিল্লি চলো অভিযানের ডাক দিয়েছে কৃষকরা। সংযুক্ত কিসান মোর্চা, কিসান মজদুর মোর্চাসহ ২০০টিরও বেশি কৃষক সংগঠনের ২০ হাজারের বেশি কৃষক এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা।
কৃষক আন্দোলন ঘিরে অশান্তি বা অপ্রীতিকর কোন ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, সে জন্যই দিল্লি ও হরিয়ানায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হরিয়ানার আম্বালা, কুরুক্ষেত্র, জিন্দ, হিসার, সিরসাসহ একাধিক জেলায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বন্ধ এসএমএস পরিষেবাও।
তড়িঘড়ি দু’টি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে হরিয়ানা সরকার। সিরসার চৌধুরি দলবীর সিংহ ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং ডাবওয়ালির গুরু গোবিন্দ সিংহ স্টেডিয়াম দু’টিকে অস্থায়ী কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। কৃষকদের মিছিলের সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে, জড়িতদের এই দুই জায়গায় রাখ হবে।
বিক্ষোভকারীরা যাতে অন্য জেলা থেকে হরিয়ানায় ঢুকতে না পারেন, সেজন্যে রাজ্যের সীমানায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অতিরিক্ত ৫০ কোম্পানি পুলিশ মোতায়েন করেছে ওই রাজ্যের সরকার। হরিয়ানার মনোহর লাল খট্টর সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।
কৃষকদের মিছিল নিয়ে সতর্ক দিল্লিও। দিল্লি সীমান্তে জায়গায় জায়গায় কংক্রিটের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া ও পেরেকের পাটাতন।
মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। কৃষকদের ঠেকাতে সরকারের এসব পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে বিরোধী দল এবং কৃষক সংগঠনগুলো।
কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পেরেক বসানো পাটাতনের একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, কৃষকের পথে পেরেক-কাঁটা বিছানো কি ‘অমৃতকাল’ নাকি ‘অন্যায়কাল’?’ রাস্তা আটকানোর চেষ্টার প্রতিবাদ করেছে সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা (এসকেএম)। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন।
ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রাপ্তিতে আইন, কৃষকদের জন্য পেনশন, শস্যবিমা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সব মামলা বাতিলের দাবিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘দিল্লি চলো’ ডাক দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকেরা। একাধিক দাবি নিয়ে পথে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা ভারত। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে লাগাতার আন্দোলন চলেছে। সেই আন্দোলনের তোপে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ‘বিতর্কিত’ কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলো মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
জেএন/পিআর