ভালবাসা দিবসের ঢেউ লেগেছে চট্টগ্রামের পর্যটন কেন্দ্র পতেঙ্গা সৈকতে। তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ডিসি পার্ক। তাছাড়া বুধবার সকাল থেকে সকল বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছেন পর্যটকরা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত পতেঙ্গা সৈকত। উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে গা ভাসিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছেন সবাই। কেউ সমুদ্র স্নানে মেতেছেন। কেউ সৈকতের বালুতে পা ডুবিয়ে আনন্দে আত্মহারা।
বুধবার সকাল থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মেতো।
ফাগুনের আগুন ধরা রঙে হৃদয় রাঙানো বাসনা নিয়ে সমুদ্রের নোনা জলে পা ভেজানো স্পন্দন কিংবা অনুভূতি কী যে শিহরণ যোগায় তা খুব কাছাকাছি থেকেই বোঝা যায়।
বুধবার সকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে পর্যটদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে এ সৈকতে। সৈকতসহ দর্শনীয় স্থানে নেচে-গেয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন করছে অগণিত পর্যটক যুগল।
আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার হোটেল ও বিপণি বিতানগুলোতেও পর্যটকের পদচারণায় তিল ধারনের ঠাঁই নেই। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পর্যটক সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ দিবসের কারণে দর্শনার্থীদের আগমন আরো বেড়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল।
স্থানীয়রা জানান, দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই দুর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আসতে শুরু করেছে।
সৈকতে কথা হয় মো. হৃদয় ও শাহিনা বেগম জুটির সাথে। তারা জানান, নোয়াখালী থেকে গতকাল বিকেলে প্রথমবারের মতো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দেখতে এসেছেন। একদিন কীভাবে কেটে গেছে তা বুঝতে পারিনি।
সৈকতে ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি স্থাপন এক অন্যরকম অনুভূতি। এ দিবসটি স্মরণে থাকবে। আর এখানকার বেশকিছু স্মৃতি মোবাইল ধারণ করে রেখেছি।
এদিকে ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ডিসি পার্কটিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তলেছেন জেলা প্রশাসন। চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যকে উপজীব্য করেই সাজানো হয়েছে অনুষঙ্গগুলো।
ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়াসহ দেশি-বিদেশি ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের সমারোহে সেজেছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় গড়ে তোলা ডিসি পার্ক।
ভালোবাসা দিবসে ডিসি পার্কে সকাল থেকেই ঢল নেমেছে তরুণ-তরুণীদের। দুর দুরান্ত থেকে আসছেন পর্যটকরাও।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাসব্যাপী ফুলউৎসব ঘিরে নানা আয়োজন চলছে ডিসি পার্কে। ফুলউৎসবের মাঝখানের বিশালাকার পুকুরে চলছে কায়াকিং।
পুকুরের দুই পাশে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, কামিনী, বেলি, চেরীসহ দেশি-বিদেশি ফুলের সমারোহ। লাখো ফুলের সমাহারে প্রাকৃতিক রূপে মুগ্ধ দর্শনার্থী ও অতিথি সবাই।
ফুলউৎসবের এই মেলায় উচ্ছ্বাসিত অনুপ্রাণিত ফুলপ্রেমী দর্শনার্থী সবাই। উৎসবে আগত সাধারণ জনতা আনন্দে যেন মাতোয়ারা। প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত ডিসি পার্ক।
পার্কে কথা হয় চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা রানা-নিশি জুটির সাথে। ভালবাসা দিবসে দুই সন্তান নিয়ে তারা ঘুরতে এসেছেন এ পার্কে। রানা বলেন, আগেও তিনি এখানে এসেছিলেন। তখন আর এখন অনেক পার্থক্য। পুরো পার্কটা তাঁর কাছে অসাধারণ লাগছে।
রীতিমতো মুগ্ধ তার স্ত্রী নিশিও। জানালেন দেশে থেকে বিদেশি পর্যটন স্পটের স্পর্শ পেলেন।
মনের সেই জমানো, অব্যক্ত কথা প্রকাশেই এসব যুগল বেছে নেয় বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামের মোমিন রোডে রেকর্ড পরিমাণে ফুল বিক্রি হয়েছে। ফুলের দোকানিরা চড়া দামে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগও রয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোডে ছোট-বড় ৬২টি ফুলের দোকান রয়েছে। পাইকারি ফুলের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, থরে থরে সাজানো নানা রঙের ফুল।
গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ও জিপসিসহ কি নেই এসব ফুলের দোকানে। কিনতে বুধবার ভোর থেকেই ভিড় করেছেন ক্রেতারাও। প্রেমপিপাসুদের পদচারনায় মুখরিত পুরো এলাকা।
এদিন মানভেদে প্রতিটি গোলাপ ১০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগেও পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হতো। একইভাবে বেড়েছে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও জারবেরার দাম।
এবার তিন দিনে রেকর্ড আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে আশা চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতি ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মো. জানে আলমের।
জেএন/পিআর