চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মুজাফরাবাদ গ্রামে সবুজ সংঘ ক্লাবের উদ্যোগে প্রতিবছরের মত এবছরও গীতাযজ্ঞ, মহতী ধর্ম সম্মেলন, মাকরী সপ্তমী স্নান ও অষ্টপ্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞসহ দুদিন ব্যাপী মহোৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে মুজাফরাবাদ যশোদা নগেন্দ্র নন্দী (আবাসিক) মহিলা ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন শ্রীশ্রী সার্বজনীন রক্ষা কালী বাড়ীতে শুরু হয় মহতী এ ধর্মীয় উৎসব। চলে ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোর পর্যন্ত।
আসুরিক শক্তি দমন করে ঐশ্বরিক শক্তি কিংবা ভগবতশক্তি অর্জনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিবছর দুদিন ব্যাপী মহতী এ ধর্মীয় মহোৎসবের আয়োজন করে সবুজ সংঘ ক্লাব।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় কীর্ত্তন সহকারে র্যালি ও ৯টায় গীতাপাঠ-গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহোৎসব শুরু হয়। গীতাযজ্ঞে পৌরহিত্য করেন সীতাকুণ্ড শংকরমঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী তপনানন্দ গিরি মহারাজ। পরে তিনি ভক্তদের দীক্ষাদান এবং দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের প্রথম পর্ব শেষ হয়।
দ্বিতীয় পর্বে মহতী ধর্মসভায় মহান আশির্বাদক ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে শুভ উদ্বোধন হয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন বিভিন্ন মঠ মন্দিরের পৃষ্ঠপোষক প্রদীপ বিশ্বাস। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপিকা প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায় ছিলেন আশীর্বাদক। তাছাড়া মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলক ছিলেন ব্যবসায়ী অজয় দত্ত।
এরপর সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড শংকরমঠ ও মিশন কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি এবং প্রবর্তক সংঘ কেন্দ্রীয় ও কার্যকরী কমিটির সদস্য অধ্যাপক শ্রী বনগোপাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ধর্মীয় আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়ার সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন-পটিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ম.ম টিপু সুলতান চৌধুরী, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ.ক.ম সামশুজ্জামান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ।
৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও মুজাফরাবাদ সবুজ সংঘ ক্লাবের সভাপতি শংকর ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন চৌধুরীর সঞ্চালনায় ধর্মসভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক ও মুজাফরাবাদ সমন্বয়ের সভাপতি বিপ্লব সেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন-মাকরী সপ্তমী উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি রিটন বিশ্বাস ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সজল সেন। ধর্মীয় আলোচক ছিলেন-বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সাতকানিয়া উপজেলার সভাপতি রাজীব দাশ।
তাছাড়া ধর্মসভা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন-মাকরী সপ্তমী উদ্যাপন পরিষদের সাবেক সভাপতি অজয় নন্দী, ১৭নং ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান, ১৮নং ইউপি চেয়ারম্যান এহাসানুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য লায়ন গোলাম সরোওয়ার চৌধুরী মুরাদ, ১৭ নং খরনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সামশুল আলম, সাধারণ সম্পাদক জয়প্রকাশ দত্ত, মুজাফরাবাদ সমন্বয়ের সাধারণ সম্পাদক কাজল কর, সমাজসেবক অমল বিশ্বাস (পিন্টু), মুজাফরাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিতাভ দত্ত, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নরেন রায় চৌধুরী, পশ্চিম মুজাফরাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কমিটির সাবেক সভাপতি রণধীর ঘোষ রায়, সমাজসেবক এড. সুজিত বিকাশ দত্ত, সাবেক ইউপি সদস্য হারাধন নন্দী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্ধেন্দু বিকাশ নন্দী, সুনিল বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শহীদুল আলী মঞ্জু, চট্টগ্রাম বেসরকারী কারা পরিদর্শক আবদুল হান্নান লিটন, ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য খোকন চৌধুরী, বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুখেন্দু বিকাশ নন্দী, সমাজসেবক অজিত চৌধুরী, হারাধন মজুমদার, ব্যবসায়ী বিকাশ চৌধুরী বিপ্লব।
একই দিন বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বৈষ্ণব প্রবর রূপক চক্রবর্তী, মিশন দত্ত (সপু) ও কাজল ভট্টাচার্য্যের পরিবেশনায় অষ্টপ্রহরব্যাপী মহোৎসবের শুভ অধিবাস শুরু হয়। রাতে মুজাফরাবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে উৎসবে আগত হাজার হাজার ভক্ত নর-নারীদেরকে প্রসাধ বিতরণ করা হয়।
দুদিন ব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫.০৭ টায় তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞের শুভারম্ভ, এরপর থেকে শুরু হয় রাধা-গোবিন্দের বাল্যভোগ ও আরতি। সকাল ৭.২০ মিনিটে মাকরী সপ্তমী স্নান, দুপুরে আনন্দবাজারে মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং রাত ১২টায় শ্রী কৃষ্ণলীলা প্রদর্শনী।
অষ্টপ্রহরব্যাপী নামকীর্তনে নামসুধা পরিবেশনায় ছিলেন, ভোলার শ্রী বিশখা অষ্টসখী সম্প্রদায়, ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার শ্রী জয় রাম সম্প্রদায়, হবিগঞ্জের শ্রী গোষ্ঠ বিহারী সম্প্রদায়, বাগেরহাটের শ্রী রাজ লক্ষী সম্প্রদায় এবং মুজাফরাবাদের শ্রী রক্ষাকালী সম্প্রদায়।
শনিবার শেষদিনের প্রথম প্রহরে দধিভান্ড ভাঙ্গন কীর্ত্তন সহকারে নগর পরিক্রমা ও মহোৎসবের পূর্ণাহুতির মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী মহতী ধর্মীয় উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
এদিকে দুদিনব্যাপী বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে প্রায় ৪দিন ধরে উৎসব অঙ্গনের আশে পাশের দীর্ঘ এলাকা জুড়ে বসে বাহারি মেলা। যেখানে অন্যান্য ধর্মালম্বী শিশু, নারী ও পুরুষের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। মেলায় বেচাকেনা হয় নানা রকমের খাবার।
ছিলো বাঁশি, বেলুন, ঝুনঝুনিসহ হরেক রকম শিশুতোষ খেলনা। তারা বাঁশিতে পোঁ পোঁ সুর তুলেছে গাল ফুলিয়ে। দর্শনার্থীদের আনন্দচারনায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গন।
মেলা থেকে কিশোরী, তরুণী ও নারীরা চুরি, দুল, ফিতা, টিপসহ রকমারি প্রসাধনি কিনেছে পছন্দমতো। বিক্রি হয়েছে হাওয়ায় ভাসা রঙিন বেলুন।
চারদিন ধরেই মণ্ডপের আঙ্গিনায় মুহুর্মুহু উলুধ্বনি, শাঁখের আওয়াজ, ধুপের সুরভিত ধোঁয়া, কীর্তনের মধুর হরিনাম সুর বাতাসে ভেড়ে বেড়ায়। এ যেন এক অন্যরকম অনুভুতি।
জেএন/পিআর