চট্টগ্রামে কারা হেফাজতে স্বামীর মৃত্যু/আদালতের দ্বারস্থ স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কারাগারের ভেতরে হঠাৎ বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হাজতি ও কয়েদির মৃত্যুর সংখ্যা। সর্বশেষ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রুবেল দে (৩৮) নামে এক বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসে।

- Advertisement -

গত ৫ জানুয়ারি কারা হেফাজতেই রুবেলের অস্বভাবিক মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। স্বামীর এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি রুবেলের স্ত্রী পুরবী পালিত। মামলার আবেদনে নিয়ে দ্বারস্থ হলেন আদালতে।

- Advertisement -google news follower

সিনিয়র জেল সুপার, থানার ওসি, কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। আদালত মামলার আবেদন জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানির জন্য রেখেছেন।

মঙ্গলবার মামলার আবেদনের বিষয়টি জয়নিউজবিডিকে নিশ্চিত করেন বাদিপক্ষের আইনজীবী অজয় ধর। বলেন, গত ৪ জানুয়ারি ভিকটিম রুবেলের উন্নত চিকিৎসার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দেন ষষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। পরদিন ভোররাতে রুবেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়।

- Advertisement -islamibank

জেল সুপার এই দায় এড়াতে পারেন না, কারণ আমার মক্কেল গ্রেফতারের সময় পুরোপুরি সুস্থ ছিল। আজ (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, বোয়ালখালী থানার ওসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন রুবেলের স্ত্রী পুরবী পালিত।

তিনি আরও বলেন, মামলায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত মামলার আবেদন জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ দেবেন বলেছেন।

মামলায় বিবাদি করা হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, মো. আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন, ইব্রাহিম, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আছহাব উদ্দিন, একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম, উপপরিদর্শক আবু মুসা, মো. সাইফুল ইসলাম, রিযাউল জব্বার, ডিউটি অফিসার, কনস্টেবল কামাল, আসাদুল্লাহ এবং কারাগারের ওয়ার্ড মাস্টার।

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ জৈষ্ট্যপুরার নিজ বাড়ি থেকে বিনা কারণে রুবেল দে (৩৮)কে গ্রেফতার করা হয়।

পরে জানা যায়, বোয়ালখালী থানার ওসির নির্দেশে চৌকিদার জয় চক্রবর্তী ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চৌধুরী মো. হাসান চৌধুরীর সহযোগীতায় রুবেলকে গ্রেফতার করে থানার উপ পরিদর্শক এস.এম আবু মুসা ও তার সঙ্গীয় অফিসারগণ। রাত ৮টার দিকে মদসহ অবস্থান করার তথ্য উল্লেখ করে ভুয়া মামলা সাজায়।

তবে ওইদিন রাত ৯টার দিকে পুলিশ কল করে রুবেল দে’কে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তার পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে ৫শ’ লিটার চোলাই মদ দিয়ে মিথ্যা মাদক মামলা সাজিয়ে চালান দেয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

ভিকটিম রুবেলের পরিবার এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা ২শ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের মিথ্যা এজাহার প্রস্তুত করে থানায় বসে ভুয়া জব্দ তালিকা তৈরি করেন এবং একজন আসামি নিজে বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় রুবেলের নামে মিথ্যা মামলা রুজু করেন।

পরদিন বোয়ালখালী থানার উপপরিদর্শক রিযাউল জব্বার রুবেল দে’র  শারীরিক আঘাতের কথা গোপন রেখেই তাকে আদালতে সোপর্দ করেন। আদালত রুবেলকে হাজতে পাঠানোর আদেশ দিলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রিজন ভ্যানে করে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুবেলের পরিবার সাক্ষাৎ করার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারে গেলে দেখতে পান, কারারক্ষীরা মুমূর্ষু অবস্থায় রুবেলকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এসেছেন।

এসময় তারা দেখতে পান রুবেলের কপালে, ডান চোখের ভ্রু এর উপর রক্তাক্ত কাটা জখম, মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরছে, সারা মুখমন্ডলে নীলা ফোলা জখম হয়ে আছে এবং প্রচণ্ড আহত ও নিস্তেজ অবস্থায় মাথা হেলিয়ে পড়ে আছে। এমনকি কথা বলার কোন শক্তি বা অবস্থা তার মধ্যে ছিল না। এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে কারারক্ষীরা কোনো জবাব দেননি।

এ ঘটনার কথা রুবেল দে’র আইনজীবীকে জানানো হলে মামলার ১ থেকে ৯ নম্বর আসামিদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ১০ থেকে ১৫ নম্বর আসামিরা ভিকটিমকে তাদের হেফাজতে অকথ্য নির্যাতন করেন।

যার প্রেক্ষিতে ৪ জানুয়ারি রুবেলের আইনজীবী তার বিরূপ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণে জেল সুপারকে আদেশ প্রদানের জন্য জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬ নং আদালতে একটি দরখাস্ত দেন।

আদালত আবেদন মঞ্জুর করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে আদালতকে অবহিত করার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরদিন সকাল ৮টায় রুবেলয়ের স্ত্রী পুরবী পালিত ইউপি সদস্য প্রদীপ সূত্রধরের মাধ্যমে জানতে পারে তার স্বামী মারা গেছেন এবং লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এরপর রুবেলের পরিবার মর্গে গিয়ে সেখানে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

এর আগে, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল কারাগারে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের রফিক উদ্দিন (৪৫)।

জানা যায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি জামালের চাচী মারা যায়। দাফন শেষে বাড়ির সামনে জড়ো হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা করে। রফিককে পিটিয়ে আহত করে।

প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রফিক থানায় মামলা করতে গিয়ে জানতে পারেন, প্রতিপক্ষ আগেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ও একই উপজেলার দোহাজারির হাছনদণ্ডী গ্রামের বাবুল মিয়া (৩৪)রও অস্বভাবিক মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর মারা যায় আব্দুস শুক্কুর (৬০)। আব্দুস শুক্কুর চান্দগাঁও থানার একটি মাদক মামলায় দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠান আদালত। হালিশহর থানার ছোটপুল এলাকার রফিকুল ইসলাম (৭৩) ওরফে হাতকাটার অস্বাভিক মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, কারাগারে অভ্যন্তরে চিকিৎসায় অবহেলা, হাজতিদের হতাশা আর পুলিশি রিমান্ডে থেকে বন্দিদের অসুস্থ হওয়ার পর এসব মৃত্যু নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে।

জেএন/হিমেল/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM