চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় জেলা শিল্পকলা ও সাড়ে ৩টায় শিশু একাডেমিতে শুদ্ধ বানান, সুন্দর হাতের লেখা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তবে দিবসের মূল কর্মসূচি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে নগরীর চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকাল ৭টায় শহিদ মিনারের উদ্দেশ্যে স্ব স্ব বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ^বিদ্যালয়, বিভাগ, দপ্তর, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকে একুশের প্রভাতফেরিতে অংশ গ্রহণ করেন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাষা শহিদদের প্রিিত স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, মাতৃভাষায় কবিতা আবৃত্তি, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ নুরেআলম মিনা, জেলা পুলিশ সুপার এস. এম. শফিউল্লাহ্, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ, জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ. কে. এম. সরোয়ার কামাল দুলু। বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে দিবসটি উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা ও শিশু একাডেমিতে আয়োজিত শুদ্ধ বানান, সুন্দর হাতের লেখা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্য পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন, আমরা আধুনিক হতে গিয়ে বাংলাকে অবহেলা করতে পারি না। বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। এ ভাষা আমাদের অহংকার। আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক ভাষা জানতে হবে, কিন্তু সবার আগে মাতৃভাষায় আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার পর। চট্টগ্রামের একজন বিখ্যাত কবি আব্দুল হাকিম বলেন ‘যে জন বঙ্গতে জন্মে হিংসে বঙ্গবানী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি’। এখানে কবি নিজের আঞ্চলিক ভাষা ‘ন জানি’ চট্টগ্রামের কথাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি এখানে বাংলা ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সবাইকে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষায় বাংলা ভাষা ব্যবহারের সময় এসেছে। আপনারা দেখেন ফরাসি, জার্মানি, জাপানীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের দেশের উপকারে নিজেকে নিবেদন করছে। সেরকম আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যদি নিজের ভাষায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া চট্টগ্রামম জেলা প্রশাসন সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচারের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। তারমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষার প্রচলন শুরু হয়েছে। আমি অন্যান্য স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট সংগঠনের বিভিন্ন ব্যানার বা বিলবোর্ডগুলোতে প্রথমে বাংলা লিখে তারপর ইংরেজি ভাষা লেখার অনুরোধ করছি। শীঘ্রই জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করবে।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাদ যোহর সংশ্লিষ্ট মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসনালয়ে ভাষা শহিদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও প্রার্থনা করা হয়। সুবিধাজনক সময়ে মহানগর এলাকার বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে ভাষা আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সংবাদ, আলোকচিত্র তথ্য ও ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
জেএন/এমআর