সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জাকের আলীর বিধ্বংসী ইনিংসের পরও শেষ বলে গিয়ে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিততেই হতো নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। বোলাররা নিজেদের কাজটা করলেন ঠিকঠাক। শ্রীলঙ্কাকে ১৬৫ রানে আটকে দেয়ার পর বাকি কাজটা ছিল ব্যাটারদের। সৌম্য সরকার, লিটন দাস বাংলাদেশের শুরুটা করলেন প্রত্যাশিতভাবেই। পাওয়ার প্লেতে দাপট দেখানোর পর লিটন-সৌম্য ফিরলেও আটকানো যায়নি স্বাগতিকদের জয়। তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে শান্ত গড়লেন বিচ্ছিন্ন জুটি। অফ ফর্মে ভুগতে থাকা শান্ত নিজেও খেললেন অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস। তাতে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সৌম্য এবং লিটন। এদিন অবশ্য প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো ভুল করেননি তারা দুজন। প্রথম ওভারের শেষ তিন বলে দিলশান মাদুশঙ্কাকে দুই চার মারলেন সৌম্য। পরের ওভারে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের প্রথম দুই বলে লিটনও মারলেন দুই চার। সবশেষ পাঁচ বলে চারটি চার মেরে স্বাগতিকদের উড়ন্ত শুরু এনে দেন। যদিও তাদের জুটি ভাঙতে পারতো চতুর্থ ওভারেই।
বিনুরা ফার্নান্দোর শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন সৌম্য। বল উইকেটকিপারের গ্লাভসে যাওয়ার পর আবেদন করেন শ্রীলঙ্কার ফিল্ডাররা। বল ব্যাটের নিচের অংশে লেগেছে ভাবনায় আম্পায়ার গাজী সোহেল আউটও দিয়ে দেন। তবে তখনই রিভিউ নেন সৌম্য। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল যখন ব্যাটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন আল্ট্রা-এজে স্পাইক ভেসে উঠে। যদিও আউট দেননি টিভি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুুকুল।
অনফিল্ড আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত বদল করতে বলার সময় তিনি জানিয়েছেন, ব্যাট ও বলের মাঝে গ্যাপ দেখেছেন তিনি। যে কারণে অনফিল্ড আম্পায়ারও নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন। তবে এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। যে কারণে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে সৈকতকে ঘিরে ধরে সফরকারী ফিল্ডাররা। তাতেও শেষ পর্যন্ত কাজ হয়নি। সৌম্যর সঙ্গে লিটনের ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৬৩ রান তোলে বাংলাদেশ।
জীবন পেয়েও অবশ্য সেটা কাজে লাগাতে পারেননি সৌম্য। মাথিশা পাথিরানার গতিময় শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ম্যাথিউসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২২ বলে ২৬ রান করা এই ব্যাটার। সৌম্য ফেরার কিছুক্ষণ পর আউট হয়েছেন লিটনও। পাথিরানার অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে চারিথ আসালাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা লিটন নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন ৩৬ রানে।
এরপর তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শান্ত। শুরুতে একটু সময় নিয়েও পরবর্তীতে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তাতে হৃদয়ের সঙ্গে জুটির হাফ সেঞ্চুরিও করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন শান্ত নিজেও। দাসুন শানাকার বলে ফ্লিক করে ছক্কা মেরে ৩৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন তিনি। তাকে সঙ্গ দেয়া হৃদয় অপরাজিত ছিলেন ৩২ রানে।
এর আগে বাঁচা মরার ম্যাচে টসে জিতে শ্রীলঙ্কাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামের করা প্রথম ওভারে কোনো রানই নিতে পারেনি লঙ্কানরা। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। আভিষ্কা ফার্নান্দোকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান তাসকিন আহমেদ।
দ্বিতীয় উইকেটে কুশাল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিস মিলে যোগ করেন ৬৬ রান। কুশালকে আউট করেছেন সৌম্য সরকার। এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ২২ বলে ৩৬ রান করে কুশাল।
এরপর কামিন্দুও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। তাকে সরাসরি থ্রোতে রান করেছেন শেখ মেহেদী। ফলে ৩৭ রানের বেশি লম্বা হয়নি এই ব্যাটারের ইনিংস। সামারাবিক্রমাকে আউট করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে তাকে আউট করেছেন ফিজ।
লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা দারুণ শুরু পেয়েছিলেন। মেহেদীকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে একটি ছক্কাও মেরেছিলেন তিনি। যদিও পরের বলে বোল্ড হয়ে আউট হতে হয়েছেন ১৪ বলে ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা এই ব্যাটারকে। এরপর শ্রীলঙ্কার ইনিংস টেনেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দাসুন শানাকা। শেষ পর্যন্ত ম্যাথিউসের অপরাজিত ৩২ ও শানাকার ২০ রানে ভর করে ১৬৫ রানের পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা।
জেএন/এমআর