উত্তর আমেরিকার দেশ কানাডায় ছয়জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চারজন অল্পবয়সী শিশু এবং তাদের মা রয়েছেন। নিহতরা সবাই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা কিছুদিন আগেই কানাডায় গিয়েছিলেন।
কানাডার রাজধানী অটোয়াতে হওয়া এই হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে কানাডিয়ান পুলিশ। শুক্রবার (৮ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গত বুধবার গভীর রাতে কানাডার রাজধানী অটোয়াতে শ্রীলঙ্কার ছয়জনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
নিহতদের নিহতদের মধ্যে একজন মা এবং তার চার শিশু সন্তানও রয়েছে। কানাডায় সাধারণত এই ধরনের হত্যাকাণ্ড বিরল এবং এই ঘটনা উত্তর আমেরিকার এই দেশটিকে দোলা দিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ভয়ানক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত। অন্যদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের বাবাও হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ফেব্রিও ডি-জয়সা নামে শ্রীলঙ্কার ১৯ বছর বয়সী এক পুরুষ শিক্ষার্থীকে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে হত্যার ছয়টি এবং হত্যার চেষ্টার একটি অভিযোগ আনা হয়েছে। ডি-জয়সা ওই পরিবারকে চিনতেন এবং তাদের বাড়িতেই বসবাস করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতরা হলেন- ৩৫ বছর বয়সী এক নারী এবং তার ৭, ৪, ২ এবং ২ মাস বয়সী শিশু। সেইসাথে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন যিনি এই পরিবারের পরিচিত ছিলেন।
অটোয়ার পুলিশ প্রধান এরিক স্টাবস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এটি সম্পূর্ণরূপে নিরপরাধ মানুষের ওপর সংঘটিত নির্বোধ সহিংসতা। পুলিশ বলেছে, সন্দেহভাজন বা পরিবারের সাথে তাদের পূর্বে কোনও সম্পর্ক ছিল না।
অটোয়ার মেয়র মার্ক সাটক্লিফ সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, এটি ‘আমাদের শহরের ইতিহাসে সহিংসতার সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি’।
রয়টার্স বলছে, অটোয়াতে মোট জনসংখ্যা ১০ লাখ হলেও ২০২৩ সালে শহরটিতে ১৪টি এবং ২০২২ সালে ১৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল।
বুধবারের ঘটনায় নিহতদের মরদেহ অটোয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম শহরতলী বারহাভেনের একটি বাড়ির ভেতরে পাওয়া যায়। মূলত বুধবার স্থানীয সময় রাত ১১টার কিছু আগে জরুরি কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের দেখতে পায়।
পুলিশ প্রধান এরিক স্টাবস বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছে অফিসাররা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দ্রুত শনাক্ত করে এবং কোনও সমস্যা ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অফিসাররা তারপর বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং নিহতদের দেখতে পান। নিহতদের মধ্যে একজন মা, তার চার সন্তান এবং পরিবারের সাথে বসবাসকারী একজন পরিচিত ব্যক্তি রয়েছেন।
রয়টার্স বলছে, কানাডায় গণহত্যার ঘটনা বিরল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক ব্যক্তি টরন্টো শহরতলীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে পাঁচজনকে গুলি করেছিল। এছাড়া ওই বছরের সেপ্টেম্বরে পশ্চিমাঞ্চলীয় সাসকাচোয়ান প্রদেশে এক ব্যক্তি ছুরিকাঘাত করে ১১ জনকে হত্যা করে।
গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই অবশ্য তিনি কোকেন ওভারডোজে মারা যান।
জেএন/এমআর