ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত তৃতীয় এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে।
খুব আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমরা ব্যাংকে ডলার জমার সুযোগ সহজ করে দেয়ার পর প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ নগদ ডলার জমা হচ্ছে।
এতে রিজার্ভ বাড়ছে। ব্যাংক কিন্তু কোনো প্রশ্ন করছে না। আবার বিদেশ থেকে আসার সময় কেউ যদি ঘোষণা দেয় আমি ডলার নিয়ে এসেছি। কেউ প্রশ্ন করবে না।
সেই ডলার আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট) হিসেবে জমা রাখা যাবে।
গভর্নর বলেন, আরএফসিডি হিসাবে যে কেউ ডলার জমা রাখতে পারছে। যে জীবনে একবার বিদেশে গিয়েছে সে–ও ব্যাংকের একটি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার জমা রাখতে পারবে।
কেউ যদি চারবার বিদেশে যায়, তাহলে ৪০ হাজার ডলার জমা রাখার সুযোগ পাবে।
২০২০–২১ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৪ শতাংশ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই–জানুয়ারি) চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় বাজার থেকে উদ্বৃত্ত টাকা উঠে এসেছে।
সরকারের অনেক কেনাকাটা আছে যা বাণিজ্যিক ব্যাংক সহায়তায় করতে পারছিল না। তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তাতে বাজার থেকে আরও টাকা উঠে এসেছে। তারপর আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে টাকার সংকট দেখা দেয়। তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে টাকা–ডলার অদলবদল বা সোয়াপের মাধ্যমে টাকা সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার প্রসঙ্গেও গভর্নর বলেন, বাজারে গুজব ছড়িয়েছিল, ডলারের দাম এত হবে। সে জন্য অনেকে ডলার আনছিলেন না।
গত ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২ শতাংশ। এখন খুব বেশি অবমূল্যায়ন আর হচ্ছে না। একধরনের স্থিতিশীলতা চলে এসেছে।
নির্বাচনের পর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসছে। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ইতিবাচক ধারা ফিরতে শুরু করেছে। এটি বজায় থাকবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতি একসঙ্গে প্রয়োগ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চাহিদা নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়া হচ্ছে। সরকারের অনেক খরচ কমানো হয়েছে।
আমরা হিসাব করে দেখেছি, তাতে চলতি বাজেটের খরচ ১৫ শতাংশ কম হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি দ্রুত নেমে আসবে। যে পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘরে নামবে না ততক্ষণ খরচ কমানোর ধারা চলবে।
এছাড়াও খেলাপিঋণের ক্ষেত্রে আগামী দুই বছরের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মন্তব্য করেন গভর্নর।
তিনি বলেন, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে পথনকশা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় একটা বড় সমস্যা হচ্ছে মন্দ ঋণ। এই জায়গায় আগামী দুই বছরের মধ্যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
জেএন/পিআর