অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। শনিবার (৯ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হল রুমগুলোতে একযোগে ভোট গণনা শুরু হয়।
ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা উপলক্ষ্যে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই ভবনে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে ভোট গণনা শুরুর আগে গণনা ছাড়াই সম্পাদক পদে এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিষয়টি আজ প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত এক পত্রে শনিবার বলা হয়, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও ইহা অর্থহীন ঘোষণা, তবুও কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাহা ‘ইগনোর’ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটনায় ভোট গণনার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা আজ বসে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় স্বতন্ত্র সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
গতকাল ৮ মার্চ ভোরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনজীবীদের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ভোট বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়। তখন থেকেই স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথি ও বিএনপির প্যানেলের প্রার্থীরা রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার হন। তারা নির্বাচন কমিশনকে ভোট গণনা করে ফল ঘোষণা করতে বলেন। শুক্রবার ভোরে হাতাহাতি মারামারির ঘটনাও ঘটে। এতে কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে মারধর করা হয়। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বহিরাগতরা এই হামলা করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বেলা ৩টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এ বিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়।
এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের। তিনি বলেন, ভোট গণনার সময় অন্য সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত না থাকায় সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুপ্রিম কোর্টে এসে বহিরাগতদের বের করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে ভোটের বাক্সগুলো পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
ফলাফল ঘোষণার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোট তো গণনাই হয়নি। সকাল ৮টার পর পুলিশের পাহারায় আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ সার্বিক বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন।
বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোটের পর আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলাম। এখনও আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আমরা এখন ব্যালট বাক্সও খুঁজে পাচ্ছি না, নির্বাচন কমিশনকেও খুঁজে পাচ্ছি না।
শুক্রবার সকালে দেখা যায় ভোটের ব্যালট বাক্স সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে পুলিশের পাহারায় রয়েছে। এই প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য ছাড়া কোনো দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা কাউকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। দুই দিনে ৭ হাজার ৮৮৩ জন আইনজীবীর মধ্যে ৫৩১৯ আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
বুধবার ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের মিলনায়তনে স্থাপিত ৫০টি বুথে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মাঝখানে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, দুই সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মোহাম্মদ আবু ওবায়েদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির পল্লব। সাতটি সদস্য পদে সৌমিত্রসরদার রনী, মো. খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, রাশেদুল হক খোকন, মাহমুদা আফরোজ, বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, রায়হান রনী।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক পদে মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), দুই সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা বেগম সন্ধ্যা, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, দুটি সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম। সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল। এই দুই প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে ইউনুছ আলী আকন্দ এবং সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান নির্বাচন করছেন।
এছাড়া সম্পাদক পদে সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোষাধ্যক্ষ পদে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছে।
জেএন/এমআর