জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন এমন কৌতুহল সাধারণ মানুষের। কারণ বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগমুহুর্তে নাটকীয়ভাবে নিখোঁজ ও রহস্যজনক বিশ্রামে চলে যাওয়ার ঘটনায় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে এবারও কি এরশাদ রহস্যজনক চিকিৎসায় চলে গিয়েছেন নাকি অন্য কোন কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন। বিগত কয়েকদিন ধরে রাজনীতির মাঠে এ নিয়ে নানা কল্পকাহিনী বের হলেও অনুসন্ধানে এরশাদের বর্তমান অবস্থানের খবর জানা গেছে।
জয়নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এরশাদ এখন তার গুলশানের প্রেসিডেন্ট পার্কেই অবস্থান করছেন। সেখানে তার এক পালক পুত্র এরশাদের সঙ্গে রয়েছেন। এছাড়া তার বাড়িতে রয়েছেন ৬ জন কাজের লোক। তারা সর্বক্ষণ তার সেবাযত্ন করেন। এছাড়া তার বাড়িতে ৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী পালা করে দায়িত্ব পালন করছেন। তার আত্মীয়স্বজন ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা-সাক্ষাৎ করছেন না তিনি। মাঝে মধ্যে দলের মহাসচিব ও ছোট ভাই জিএম কাদের আসলে শুধু তাদের সঙ্গে দেখা করেন।
জানা গেছে, এরশাদ নানান কারণে এখন তার দলের বেশ কয়েকজন নেতার পাশাপাশি তার স্ত্রী রওশন এরশাদের ওপর ভীষণ ক্ষেপে আছেন। কারণ তার অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়েও একবারের জন্যও এরশাদের সঙ্গে দেখা করেননি তার স্ত্রী রওশন এরশাদ। প্রায় ৯০ বছর বয়ষ্ক এরশাদ এখন সার্বক্ষণিক চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণের মধ্যে আছেন। এরশাদের ব্লাডপ্রেসার ভালো, ডায়াবেটিস নেই এবং অন্যান্য সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে দু’তিন মাস পুরো বিশ্রামে থাকতে হবে। এছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্যের ঘটনায় তিনি দলটির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদারকে বহিস্কার করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। ছোট ভাই জিএম কাদেরের পরামর্শে আপাতত তিনি নীরব থাকলেও প্রকাশ্যে আসতে ব্যকুল তিনি।
এদিকে এরশাদের চিকিৎসকরা তাকে রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে আপাতত একা থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এখন তার শারিরীক যে অবস্থা তাতে করে কোন সভা-সমাবেশ করতেও নিষেধ করেছেন তারা। কিন্তু এরশাদ সবকিছুতেই ষড়যন্ত্র দেখছেন। তার ধারণা মহাজোটগতভাবে আসন ভাগাভাগি নিয়ে তিনি সরকারকে চাপ দেওয়ায় তার অবস্থা এমন হযেছে। শুধু তাই নয়, এরশাদের ধারণা তিনি গৃহবন্দী। তবে তিনি মনে করেন মহাজোট না আসলে তার ও তার দলের অবস্থা করুণ হবে। শেষ বয়সে যেতে হতে পারে কারাগারে। এমন শংকায় অসন্তোষ থাকলেও মহাজোটের সঙ্গেই নির্বাচন করবেন এরশাদ। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি । তবে তার দলকে আরো কয়েকটি আসন যেন দেওয়া হয় সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তদবির করতে নতুন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, চিকিৎসকদের নিষেধের কারণেই তিনি বের হয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। উল্লেখ, চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রংপুর সফরে যান এরশাদ। সেখানে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন এরশাদ। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার শেষে দেশে ফেরার পর তার শারিরীক অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল। চিকিৎসা শেষে গত ৩০ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হয় দলটির নবনিযুক্ত মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, দলের চেয়ারম্যান এরশাদ আসলেই খুব অসুস্থ। তার বিশ্রাম দরকার। এজন্য তিনি বাসায় রয়েছেন। তিনি বলেন, এরশাদকে নিয়ে বাইরে যা প্রকাশিত হচ্ছে সবই গুজব। এসব গুজবে কান না দিতে তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র অনুসারে দল চলবে। এখানে বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই।