জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের(জবি) শিক্ষার্থীর আত্মহত্যাজনিত কারণে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ, শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ও পাঁচ (৫) সদস্যবিশিষ্ট উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
১৬ মার্চ (শনিবার) বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের (১৩তম ব্যাচের) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা গত রাত (১৫ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার) কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার সুইসাইড নোটে দেওয়া আইন বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪তম ব্যাচের) অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার ও দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সহায়তাকারী ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রক্টরিয়াল বডি থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ (৫) সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উল্লেখ্য, কমিটিকে উক্ত ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দ্রুত উপাচার্য মহোদয়ের নিকট প্রতিবেদন পেশ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
উপাচার্য বলেন, ফাইরুজ যে রিপোর্টের কথা বলেছে, সেই রিপোর্ট আমাকে দেওয়া হয়নি। সে বলেছে তাকে হিউমিলিয়েট করা হয়েছে। সেই কমপ্লেইনের রেকর্ড আমাকে দেওয়া হয়নি। সেই সহকারী প্রক্টরকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। তদন্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজে যুক্ত হতে পারবেন না।
ড. সাদেকা হালিম আরও বলেন, আমি মাত্র তিন মাস এখানে এসেছি। এসময়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করার চেষ্টা করছি। প্রক্টরিয়াল বডির প্রধানসহ পাঁচজন সদস্য নতুন। যে ক’টি যৌন হয়রানি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন শেষ হয়েছে আগামী সিন্ডিকেটে প্রত্যেকটির সুরাহা করা হবে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফাইরুজ তার সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত আম্মান তাকে থ্রেট করত, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ফাইরুজের অভিযোগপত্র উপাচার্যকে না দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযোগপত্রটি খুঁজে পাওয়া গেছে। সেটি অনেক পুরনো ফাইল। এ কারণে খুঁজে পেতে সময় হয়েছে। বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ঘটনা নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সে যদি আসতো তাহলে ভিসি ম্যামের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতাম। বিষয়টি নিয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর উপাচার্য সাদেকা হালিম নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন। উপাচার্য কার্যালয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ করেন। পরে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। আজ বিকেল ৩টায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তারা।
জেএন/এমআর