কোনোভাবেই হকারদের কবল থেকে দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না চট্টগ্রাম নগরের মার্কেট এলাকার ফুটপাত। সিটি করপোরেশন দিনের পর দিন টানা অভিযান পরিচালনার করলেও ফুটপাত ছাড়ছেন না হকারেরা।
অভিযান শেষ হলেই আবারও ফুটপাত দখল করে বসছেন তারা। স্টেশন রোড থেকে আমতল পর্যন্ত প্রায় প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে ফুটপাতের অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও সন্ধ্যার পর জমে উঠে এসব ফুটপাত।
নগরের স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, আমতল, কোতুয়ালীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে। স্টেশন রোডে সামনে ‘হকার বসা নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ডের নিচে হকারদের বসে থাকতে দেখা যায়।
এছাড়া সন্ধ্যার পর রাস্তার অর্ধেকও দখল থাকে হকারদের। ফলে বিকেল থেকে তীব্র যানজটের কারণে এই সড়ক এড়িয়ে চলেন অনেকে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরেবাসীকে। ফুটপাত ছেড়ে রাস্তার উপর দিয়ে হাটতে হচ্ছে তাদের।
সড়কের দুই পাশেও রাজত্ব রয়েছে হকারদের। এসব সড়কের অনেক ব্যবসায়ী দোকানে সামনে হকার বসিয়ে টাকা আদায় করছেন।
অনেক ব্যবসায়ী আবার দোকানের কিছু পণ্য ফুটপাতেও বিক্রি করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে ফুটপাতে মানিব্যাগ, হেডফোন, চেইন ইত্যাদি পণ্য বিক্রেতা একজন বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করলে সমস্যা কোথায়?
তামুকুন্ডুলাইনের থাই ফ্যাশন নামে একটি দোকানের কথা বলে তিনি বলেন, এই দোকানের মালিক হয়ে আমি এসব পণ্য ফুটপাতে বিক্রি করি। বাধা দিবে কে?
নিউমার্কেটের সামনে ফুটপাতে সিম কার্ড বিক্রি করা হৃদয় বলেন, দুই বছর ধরে এখানে বসে সিম কার্ড বিক্রি করি। কেউ বাধা দেয়নি। আমি মার্কেটের ইনচার্জের অনুমতি নিয়ে এখানে ব্যবসা করি, তাই কোনো ঝামেলা হয়না।
এদিকে গত, বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আট শতাধিক অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এরপর সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) থেকে পুনর্দখল ঠেকাতে অভিযান শুরু করে চসিক।
কথা হয় চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার সমিতির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, কোনো ঘোষণা ছাড়াই রমজানের আগে এভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
পরিবার চালাতে হকাররা শৃঙ্খলার মধ্যেই ব্যবসা করছিলেন। অথচ বিনা নোটিশে পাঁচ হাজার হকারের রুটি-রুজি নষ্ট করা হয়েছে।
এছাড়া দেখা যায়, সন্ধ্যা হলেই ফুটপাতে জ্বলে ওঠে লাখ লাখ বৈদ্যুতিক বাল্ব। জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও এক শ্রেণির দালাল এসব বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দিয়ে চুটিয়ে অবৈধ ব্যবসা করছে।
আর এ অবৈধ বিদ্যুতের অধিকাংশই ব্যবহার করা হচ্ছে রাতের বেলায়। কয়েক হাজার হকার ফুটপাতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তার পুরোটাই অবৈধ সংযোগ বলে বিবেচিত।
ফুটপাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য মিটারের ব্যবস্থা নেই। তাই কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনো হিসাবও নেই।
বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক নাহিদ হোসেন বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করলেও তারা আবার এসে দখন করছে।
কয়েকদিন আগেও অভিযান দেখছি। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযান অভিযান খেলায় জনপ্রতিনিধিরা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চান বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, হকাররা ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা করার কারণে নানান অপরাধ ও দুর্ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ দুইদিন পর আবারও ফুটপাতের দুয়েক জায়গায় হকার বসতে শুরু করে।
এরপর আবার ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে পুনর্দখল ঠেকাতে অভিযান শুরু করে চসিক। এতে ক্ষুব্ধ হকাররা চসিক অভিযান দলের ওপর হামলা চালায়। ভাঙচুর করে করপোরেশনের গাড়ি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে হকাররা আমতল ও নুপুর মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ওবায়েদুল হক বলেন, পুলিশের দায়ের করা মামলায় ৩৫ জন এবয় সিটি করপোরেশনের মামলায় অভিযুক্ত ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
জেএন/হিমেল/পিআর