বাংলাদেশ ইতিহাসের সেরা অ্যাথলেট কে? হঠাৎ করেই যদি চলতি পথে কাউকে প্রশ্নটি করা হয় কি উত্তর আসবে সেটিও নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন। হ্যাঁ, খুব বড় কোনো বিতর্ক ছাড়া সাকিব আল হাসানকেই বলা যায় দেশের ইতিহাসে সেরা অ্যাথলেট। তবে এইনিয়ে তর্ক থাকলেও “দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব” এমন কথা এক বাক্যে সকলেই মেনে নেবেন। কারণটাও নিশ্চয় অজানা নয়।
একটা সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট ছিল নিভু নিভু প্রদীপের মতো। মাঝেমধ্যে আলোর ঝলকানি দেখিয়ে কয়েকজন ক্রিকেটার সৃষ্টি করতেন চমক। দলীয় পারফরম্যান্স না থাকায় অনেকবারই তীরে এসে ডুবে গেছে তরী। সে সময় গেল কয়েক বছরে কিছুটা ফুরিয়েছে। আর সেই আলো স্থায়ীকরণের পেছনে সবথেকে বড় কারিগরের নাম এই সাকিবই। দেশীয় ক্রিকেটের পান্ডব কিংবা নক্ষত্র যাই বলা হোক না কেন; আজ তার ৩৭তম জন্মদিন।
১৯৮৭ সালের এই দিনে (২৪ মার্চ) মাগুরায় জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব ক্রিকেটের এই তারকা ক্রিকেটার। মাগুরার আলোকদিয়া মাঠ থেকে বিকেএসপি হয়ে মিরপুর মাঠ কাঁপিয়ে ছোট্ট ফয়সাল এখন রাজত্ব করে চলেছেন লর্ডস, ইডেন-গার্ডেনসেও।
সাকিবকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয় বললে অত্যুক্তি হয় না। কানাডার গ্লোবাল টি-২০ থেকে শুরু করে সিপিএল, বিগ ব্যাশ, এলপিএল… সবখানে লাল-সবুজের পতাকাটা উঁচিয়ে ধরেছেন তো ওই একজনই। খেলেছেন আইপিএলের প্রেস্টিজিয়াস আসরেও। শিরোপাও পেয়েছেন দুবার। আর জাতীয় দলের জার্সিতে সাকিব ঠিক কেমন, সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ে সাকিবের শেষসময়ের আগুনে বোলিং, ইংল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে বেন স্টোকসকে অসাধারণ ডেলিভারিতে ফেরানো, ২০১৯ বিশ্বকাপে ক্ষুরধার পারফরম্যান্স, কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে দুর্দান্ত এক শতক… এমন কত কত ম্যাচে নায়ক তো ওই সাকিবই।
সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা বই বললেও ভুল হবে না। সাকিবকে বই বলার কারণে অনেকেই আদিখ্যেতাও বলতে পারেন। চলুন সেই কারণও ব্যাখা করা যাক। পড়াশোনা কিংবা জ্ঞান চর্চার চেষ্টায়, কোনো এক বই থেকেই শেখার চেষ্টা করি। তেমনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময় বা এক যুগ আগেও এমন কোন ক্রিকেটার নেই, যিনি সাকিবের থেকে শিখতে চাননি।
উঠতি যেসব ক্রিকেটার রয়েছেন, তারা সবসময়ই সাকিবের কাছে নতুন কিছু শিখতে অধীর আগ্রহে বসে থাকেন। সেসব তরুণ ক্রিকেটারদের মাথায় সবসময় থাকে সাকিবের মতো তারকা হওয়ার লক্ষ্য। সাকিবের এক জীবনে এখন পর্যন্ত যত পাওয়া, তা নিয়েই তিনি কিংবদন্তীর কাতারে পৌঁছে গেছেন! কদিন আগে বিপিএল খেলা তরুণ পেসার রোহানত দৌলা বর্ষন জানিয়েছিলেন সাকিব তার আইডল।
বিশ্ব ক্রিকেটে অলরাউন্ডারের তালিকায় বছরের পর বছর শীর্ষে থাকা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। তিনি সাকিব আল হাসান বলেই হয়তো সম্ভব। শহীদ আফ্রিদি থেকে জ্যাক ক্যালিস কিংবা যুবরাজ সিং তারা বড় তারকা হলেও, দীর্ঘ সময় রাজত্ব ছিল না তাদের। সেক্ষেত্রে সাকিব অনেক দুর্বার। অবশ্য সেই সুপার হিরো ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে গেছেন। বয়সের ভারটাও নেহায়েত কম নয়, জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ক্রিকেটে ব্যয় করেছেন বাংলাদেশের এই সুপারস্টার।
সব মিলিয়ে হয়তো আর ২-৩ বছর ২২ গজে দেখা যাবে এই টাইগার ক্রিকেটারকে। তারপরই ক্রিকেটকে সাকিব বিদায় বলে দেবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট যদি একটা বঙ্গপোসাগর হয়ে থাকে, তবে সাকিবকে সেই সাগরের নীল বলা যায়! সাকিবের মতো একজন খেলোয়াড় প্রতিটি দেশের চাহিদার কেন্দ্রে থাকে। লোকে বলে সাকিবের মাথা এদেশের ক্রিকেট ব্রেইনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। সেরা সাইকোলজির দিক থেকে সাকিব পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্রিকেটারও।
একথা বলার নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। কেননা মাঠের বাইরের শত শত সমালোচনা সাকিব কিভাবে পেছনে ঠেলে সামনে এগিয়ে চলেন, তা ভাবনার বিষয়। তিনিও যে রক্তমাংসে গড়া মানুষ। অন্য ক্রিকেটার থেকে সাকিব এখানেই অনন্য, মাঠের বাইরের গল্প সাকিব মাঠে আনতে পছন্দ করেন না। ২২ গজের সাকিব তাই নিশ্চয়ই কোটি ভক্তের আইডল। সব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে সাকিবের ছুটে চলার গতিতে যেন উসাইন (বোল্ট) ঝড়!
সাকিব আল হাসান সেই প্রেম, যা বারবার ফিরে আসে দুর্বার গতিতে। মাঠের বাইরের কারণে সাকিবকে ঘৃণা আপনি করতেই পারেন, তবে ক্রিকেটের সাকিবকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসাতে আপনি বাধ্য। শুভ জন্মদিন বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান এবং মাগুরার ফয়সাল।
জেএন/এমআর