হঠাৎ করেই চট্টগ্রামের বাজারে ফের বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। খাতুনগঞ্জের পাইকারি থেকে রেয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা বাজার, দুই ধরনের বাজারেই এখন পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর পরই নিত্যপন্যটির দাম চড়া হয়। গত দুদিনে পাইকারি বাজারে বেড়েছে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, আর খুচরা বাজারে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত।
নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতিবেশী দেশ ভারত রফতানি বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়েছে-এই খবরেই দেশের অসাধু পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আবারও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার চট্টগ্রামের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ-চাকতাই এবং খুচরাতে বড় রেয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলী বাজার ও কাজির দেউড়ির পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।
গত শনিবার খাতুনগঞ্জ-চাকতাইয়ে পাইকারিতে ৫০ টাকা কেজিতে মেহেরপুর (দেশি) পেঁয়াজ, ৫৫ টাকা কেজি দরে ফরিদপুর (দেশি) পেঁয়াজ এবং ৬০ টাকা কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও একদিনের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজেই কেজি প্রতি ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করছেন আড়তদাররা।
অন্যদিকে রেয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলী বাজার, কাজির দেউড়ি ও বক্সির হাটে শনিবার যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, সে পেঁয়াজ রবিবার বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ রফতানিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এ কারণেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও হাটবাজারে আমদানি কম থাকায় পাইকারি বাজারে মনপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩শ থেকে ২ হাজার ৫শ টাকা দরে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শাহীন আলম একজন ক্রেতা জানান, তিনি রবিবার পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে হতবাক হয়েছেন। আগের দিন শনিবার যে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি ৬০ টাকার নিচে, এক দিনেই তার কেজি দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়।
আজম, তুলি ও রোহান নামে কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলছেন, টিসিবির বাজারে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি আপাতত বন্ধ থাকার ফলে ব্যবসায়ীরা কৌশলে দাম বৃদ্ধি করেছে।
তারা দাবি করেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও যেন বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যে টিসিবির তরফ থেকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়। তা হলে কমে যাবে পেঁয়াজের দাম।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের পেঁয়াজের আড়তদার হাকিম মোল্লা জানান, শনিবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কম থাকায় আমরাও পাইকারিতে কম দামেই বিক্রি করেছি। রবিবার থেকে পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজের দাম চড়্ তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরও কয়েকজন আড়তদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। অবিলম্বে পেঁয়াজ আমদানি না করা হলে ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে পেঁয়াজের বর্তমান বাজারদর স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপরও দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সিন্ডিকেট ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন ক্যাব নের্তৃবৃন্দরা।
কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি হঠাৎ হঠাৎ পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায় বাজার সিন্ডিকেটের কারণে। অথচ আমাদের কথাকে আমলে নেওয়া হয় না।
ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সময় বাড়িয়েছে-এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এর সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির তো কোনো সম্পর্ক নেই। তা হলে বাড়ল কেন; বাড়ল পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের কারণে। বাজারের এই সিন্ডিকেট যতদিন না ভাঙ্গা যাবে ততদিন পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
উল্লেখ্য: রোজা শুরুর আগে দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এর পর দেশে নতুন পেঁয়াজে ভরপুর এবং গত ১৫ মার্চ সরকার উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেঁধে দেওয়ার পর পেঁয়াজের দাম বেশ কমে আসে।
কয়েক ধাপে ৮০ টাকা থেকে ৬০ টাকা এবং একপর্যায়ে ৪৫ টাকা কেজিতেও নেমে আসে পেঁয়াজ গত সপ্তাহে। বাজারে দিন তিনেক কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারেন ক্রেতারা। এর পর থেকেই আবার বাড়তে শুরু করে দাম।
জেএন/পিআর