চট্টগ্রাম ওয়াসা

পানির দাম ৬১ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রাম ওয়াসা গ্রাহক পর্যায়ে এক লাফে ৬১ শতাংশ দাম বাড়াচ্ছে। মার্চ থেকেই প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানিতে আবাসিকে ২৯ টাকা এবং অনাবাসিক (শিল্প ও বাণিজ্য) ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেড় দশকে এবারই সবচেয়ে বেশি পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ওয়াসার তরফ থেকে এসেছে। এমনিতে প্রতিবছর ৫ শতাংশ করে পানির দর বাড়ায় সংস্থাটি।

- Advertisement -

এক লাফে এত দাম বাড়ানোর এখতিয়ার চট্টগ্রাম ওয়াসার না থাকায় গত ১৪ মার্চ বোর্ডের ৭৯তম সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। বোর্ডে অনুমোদন পেলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দাম বাড়ানোর আবেদন পাঠানো হবে। এর পর প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়।

- Advertisement -google news follower

বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনের নেতারা বলছেন, পানির অপচয়, অনিয়ম-দুর্নীতি কমাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ওয়াসার। পানির দাম বাড়িয়ে তাদের অনিয়মের বোঝা বারবার গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তাদের দাবি, পানির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া ও বিভিন্ন প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ শোধের জন্য পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, বর্তমানে ওয়াসার মোট সংযোগ সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৭১টি। এর মধ্যে ৮২ হাজার ৬৪২টি আবাসিক ও ৬ হাজার ১২৯টি অনাবাসিক। এখন পানির দাম প্রতি হাজার লিটার আবাসিকে ১৮ টাকা এবং অনাবাসিকে ৩৭ টাকা, যা ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমান সংযোগের মধ্যে পানির ব্যবহার ৯১ শতাংশ আবাসিকে ও ৯ শতাংশ অনাবাসিকে। এ হিসাবে বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির গড় বিক্রয় মূল্য ১৯ দশমিক ৭১ টাকা।

- Advertisement -islamibank

শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের খরচ বিবরণী থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, বেতন-ভাতা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সুদ-আসলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাড়ার ফলে প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ৩১ দশমিক ৮০ টাকা। এতে দেখা যায়, প্রতি হাজার লিটারে ঘাটতি থাকে ১২ টাকা। এ ঘাটতি পূরণ করতে পানির বর্তমান দাম ন্যূনতম ৬১ দশমিক ৩৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করার মত দেন ওয়াসা কর্মকর্তারা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসার আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ চুক্তি অনুযায়ী সুদ-আসলসহ মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আগামী অর্থ বছর থেকে পরিশোধ করতে হবে। এসব কারণ দেখিয়ে চলতি মার্চ থেকে প্রতি ইউনিট পানিতে আবাসিকে ২৯ টাকা ও অনাবাসিকে ৫৯ টাকা ৭০ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি মানতে নারাজ চট্টগ্রাম ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কাজী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ানো হচ্ছে না। পানির উৎপাদন খরচের সঙ্গে বর্তমান দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৪১ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৫ টাকা ৩২ পয়সা। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালে আবাসিকে পানির দাম হয় ৬ টাকা ৯০ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৯ টাকা ৫৯ পয়সা। আর ২০২০ সালে এসে আবাসিকে পানির দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৪০ পয়সা আর বাণিজ্যিকে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে করা হয় আবাসিকে ১৩ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা।

এদিকে প্রতি মাসে চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি উৎপাদন করে ১ হাজার ৪০০ কোটি লিটার। বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ১৬ হাজার ৮০০ কোটি লিটারের বেশি। এর মধ্যে বছরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি লিটার পানি হাওয়া হয়ে যায়। উৎপাদিত পানির ৩১ শতাংশের কোনো বিল পায় না ওয়াসা। কাগজে-কলমে এটিকে হিসাববহির্ভূত পানি বলা হয়। এর মধ্যে পাইপলাইনের ফুটো, অবৈধ সংযোগ, মিটারে কারসাজির মাধ্যমে এসব পানি নষ্ট হয় বলে দাবি করেছেন ওয়াসার প্রকৌশলীরা।

পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি লিটার পানি নষ্ট হচ্ছে। এর বোঝা চাপানো হচ্ছে গ্রাহকের ঘাড়ে। এ পরিমাণ পানি বাঁচানো গেলে দাম বাড়াতে হতো না। তবে ওয়াসার সেদিকে নজর নেই।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ওয়াসা ঋণ নিয়ে প্রকল্প নেওয়ার আগে কি অংশীজনের মতামত নিয়েছিল? তারা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়েছে। তা ঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ জন্য খরচ বেড়েছে। এর বোঝা কেন গ্রাহকরা টানবেন? এক লাফে পানির দাম ৬১ শতাংশ বাড়ানো শুধু অন্যায্য নয়, অযৌক্তিকও। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠছে। এর মধ্যে পানির দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষের টুঁটি চেপে ধরার মতো অবস্থা হবে।’

জেএন/এমআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM