পবিত্র রমজান মাসকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম দশক রহমত, দ্বিতীয় দশক মাগফেরাত ও তৃতীয় দশককে বলা হয় নাজাতের দশক। আজ শেষ দশক শুরু। পবিত্র মাহে রমজানের এই দশকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (স.) এই দিনগুলোতে আমলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। কারণ শেষ দশকে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
আমাদের উচিত, পবিত্র রমজানের এই দশককে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করা। ইবাদত-বন্দেগি বাড়িয়ে দেওয়া। শেষ দশকে নবীজি (স.)-এর বিশেষ কিছু আমল নিচে তুলে ধরা হলো।
১. ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া: পবিত্র রমজানে রাসুলুল্লাহ (স.) ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। শেষ দশক এলে এই মাত্রা আরো বেড়ে যেত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা এত বেশি বাড়িয়ে দিতেন, যেমনটি অন্য সময় করতেন না। (আস সুনানুল কুবরা: ৮৩৫১; মুসলিম: ১১৭৫)
২. পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দেওয়া: রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (স.) রাত জাগতেন। শেষরাতে পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (স.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি: ২০২৪)
৩. ইতেকাফ করা: রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সুন্নত আমল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (স.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতেকাফ করেছেন।’ (বুখারি: ১৮৬৮; মুসলিম: ২০০৬)
৪. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা : মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’ (সুরা কদর: ১-৫)
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান বলতে মূলত বিশেষ ফজিলত লাভের আশায় গুনাহ বর্জন এবং ইখলাসের সঙ্গে দোয়া-দরুদ, জিকির-আজকারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করাকে বোঝানো হয়। যেহেতু রাতটি কখন তা নিশ্চিত নয়, তাই শেষ দশকে বিশেষ করে বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে বলা হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি: ২০১৭)
৫. বেশি বেশি দোয়া করা : নবীজি (স.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বলো- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)
৬. তাওবা করা: মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস রমজান। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (তিরমিজি: ৩৫৪৫)
৭. সদকাতুল ফিতর আদায় করা: পবিত্র রমজানের শেষ দশকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সদকাতুল ফিতর আদায়। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। (বুখারি: ১৫০৩)
নবীজির উম্মত হিসেবে আমাদের উচিত- নবীজি (স.)-এর শেখানো উল্লেখিত আমলগুলো শেষ দশকে যথাযথ সম্পন্ন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
জেএন/এমআর