টাইগারপাস-সিআরবির শতবর্ষী গাছ ও সড়ক ধবংস করে র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা অবিলম্বে না আসলে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারী। নাগরিক সমাজ- চট্টগ্রাম এর আয়োজনে সোমবার বিকেলে নগরীর টাইগারপাস মোড়ে শতবর্ষী গাছের নিচে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা মাহফুজুর রহমান বলেন, যদি র্যাম্প করতে হয় অনেক জায়গা আছে এখানে গাছ কেটে কেন করতে হবে। এখানে কোন গাছ কাটা চলবে না। প্রকৃতি অক্ষুন্ন রেখে যে কোনো কিছু করতে পারে, তারা সেটা করুক। মূল লক্ষ্য এসব শতবর্ষী গাছ ও দ্বিতল রাস্তাটি নষ্ট করে সিআরবির পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংস করা। তারপর সিআরবিতে থাবা বসানো। শতবর্ষী গাছ কেটে নতুন চারা লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
অধ্যাপক মো ইদ্রিস আলী বলেন, যারা ৬ কিলোমিটার রাস্তা করতে ১৮টি গাছ কাটে তারা মানুষ নামের শকুন। জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের দারুণ দক্ষতা আমরা দেখেছি। যারা সিআরবি ধ্বংস করতে পারেনি তারা এখন সিআরবির প্রতিবেশ ধ্বংস করতে চায়। তারা বলছে মাত্র ৪৬টি গাছ কাটা হবে। এটা কেমন মুর্খতা। তারা শতবর্ষী গাছ কেটে চারা লাগাতে চায়। ধিক্কার জানানোর ভাষা আমাদের নেই। অপউন্নয়নের নামে বাণিজ্য থেকে সরে আসুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাগ্রত আছেন। তরুণদের নিয়ে আমরা আন্দোলন করে সিডিএকে সরে আসতে বাধ্য করব।
খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি ডা একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই সড়ক শুধু চট্টগ্রামের নয়। দেশের ও বিশ্ব প্রকৃতির সম্পদ। যা সৃষ্টি করতে পারবেন না তা কেন ধ্বংস করছেন। এই নান্দিকতা দেশের সম্পদ। সিডিএর লোকজন যা বলছেন তা হঠকারিতা। সিআরবির মাটি কামড়ে আমরা পড়েছিলাম। এখানে এক টুকরো মাটিও কাটতে দেয়া হবে না। নয়ত আমরা প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে এই সম্পদ রক্ষা করব। অবিলম্বে সিডিএ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ঘোষণা দিন। নিউমার্কেট থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের অনেক বিকল্প আঝে।
সভাপতির বক্তব্যে নাট্যজন ও সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, এত বিকল্প থাকতে কেন গাছ কেটে আর দ্বিতল রাস্তা ধংস করে কেন র্যাম্প করতে হবে সেটা বোধগম্য নয়। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দ্রুত বিকল্প স্থানে র্যাম্প করার ঘোষণা না দিলে লাগাতার আন্দোলন করে আমরা টাইগারপাস সিআরবির এই সড়ক ও গাছ রক্ষা করব।
পিপলস ভয়েস এর সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, আমরা বারবার চট্টগ্রামের পরিবেশ ও ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় রাস্তায় নামি। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। গাছ কাটতে আবার পরিকল্পনা করছে। আমরা কেউ উন্নয়ন বিরোধী নই। এই র্যাম্প এখানে কেন? এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার সময়ও শুরুর স্থান নিয়ে সমস্যা হয়। এটা দেওযানহাট থেকে শুরু করা যেত। তা না করে পাহাড় কেটে লালখান বাজার থেকেই শুরু করা হয়। নতুন করে গাছ রোপন করবেন বলছেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী। আপনি কি একটি দ্বিতল সড়ক করতে পারবেন। এই শতবর্ষী গাছ ফিরিয়ে দিতে পারবেন? সিআরবিতে একই ষড়যন্ত্র হয়েছিল। আন্দোলন করে তা প্রতিহত করেছি। এখনই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। না হলে আন্দোলন সংগ্রাম করে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য করব।
বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী বলেন, সিডিএ এ পর্যন্ত পরিবেশ বান্ধব একটি প্রকল্পও করতে পারেনি। ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত ১৫টি পাহাড় কেটে সিডিএর স্থপতি প্রকৌশলীরা অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে। সিআরবি আমরা আন্দোলন করে রক্ষা করেছি। একজন পিডি কিভাবে সব বড় প্রকল্পের পিডি হন। প্রয়োজনে আরো দীর্ঘ আন্দেলন হবে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ বলেন, রাস্তা করেন, র্যাম্প করেন কিন্তু একটা গাছও কাটতে পারবেন না। আপনারা গাছ কাটতে হলে নাগরিকদের গলা কাটুন আগে। পাহাড় না কেটে, গাছ না কেটে আপনারা কিছু করতে পারেন না? শত বছর বযসী গাছগুলো খুন করতে দেয়া হবে না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে চট্টগ্রামবাসী এ গাছ রক্ষা করবে। আমাদের আন্দোলন চলবে।
লেখিকা মোহছেনা ঝর্না বলেন, প্রকৃতি বাঁচলে আমরা বাঁচব। একটা গাছ রোপন করলে ২০-২৫ বছরে বড় হয়। আর শতবর্ষী গাছ কাটতে চাইছে। এটা কেমন কথা! আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এ গাছ বাঁচাতে হবে।
সাংবাদিক ঋত্তিক নয়ন বলেন, সিডিএ এবার ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেছিলেন সিআরবি হেরিটেজ। এখন সিডিএর স্থপতিরা মনে করছেন তারাই একমাত্র প্ল্যানার। আমরা যদি ৪৮৫ দিন আন্দোলন করে সিআরবি রক্ষা করেছি। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। যদি সিডিএ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে আমরা রাজপথে থাকব। আন্দোলনের মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, বারবার চট্টগ্রামের প্রকৃতির উপর আঘাত কেন? এখন গাছ নষ্ট করে কেন। বিকল্প অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সেটা করছে না। আবারো বলছি এর বিকল্প ভাবুন।
রাজনীতিবিদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ গাছগুলো আমাদের মায়ের মত। দুর্নীতি করতে করতে তাদের এমন অবস্থা কি করছে তারা সেটা বুঝতেও পারছে না।
খাল নদী রক্ষা কমিটির আলীউর রহমান বলেন, এখানকার ১০৭টি গাছ কাটতে টেন্ডার হয়েছিল। প্রতিবাদের মুখে বন্ধ হয়েছিল। কিছুদিন আগেও পাহাড় কেটেছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার নামে। এখন গাছ কেটে কিসের উন্নয়ন করছেন? আপনারা আইনের উর্ধে নন। বিকল্প অনেক জায়গা আছে। আপনার আমাদের সম্পদ নষ্ট করে কিসের ডিজাইন করছেন। গাছ ও পাহাড় নষ্ট না করে অন্য কোথাও র্যাম্প করুন।
সাংবাদিক সারোয়ার আমিন বাবু বলেন, আমাদের শৈশব কেটেছে এখানে। অথচ আজ বলা হচ্ছে গাছ কাটবে। কোনো গাছ কাটতে দেয়া হবে না।
প্রতিবাদী ছড়া পাঠ করেন উৎপল বড়ুয়া।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রীতম দাশের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সুপ্রতীম বড়ুয়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, পিপলস ভয়েস সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, যুব নেতা শিবু চৌধুরী, সাংবাদিক মিনহাজুল ইসলাম, কায়সার চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক মোরশেদুল আলম প্রমুখ।
জেএন/এমআর