সেই ১৯৯২ সালের কথা। কিশোরী মেহেরুন নেছার বয়স তখন ১৬। হঠাৎ বাবা মারা গেলেন। ব্যবসা তেমন ভাল যাচ্ছিল না বড় ভাই এমদাদউল্লাহ শাহীনের। এতে বেশ চাপে পড়ে যান মেহেরুন। ফলে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার ওপর। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়াও। একপর্যায়ে প্রশিক্ষণ নেন সেলাই ও বাটিকের। পরে এই সেলাই ও বাটিকের কাজ করেই সংসার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া শিখিয়েছেন বোনদের। আবার নিজেও লেখাপড়ায় ফের মনোযোগী হন। এসএসসি পাশের সাত বছর পর দিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষা। স্নাতক পাশ করে এখন তিনি জাফরনগর লিটল ফ্লাওয়ার কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। মাসহ পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের সংসারের হাল ধরতে জীবনের ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিয়ে করেননি। প্রতিষ্ঠিত করেছেন ভাই ও বোনদের।
রোববার (৯ ডিসেম্বর) সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও বেগম রোকেয়া দিবস-২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে ‘জয়িতাদের সংবর্ধনা’ দেওয়া হয়। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য পাঁচ নারীকে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মেহেরুনসহ পাঁচ জয়িতা উপস্থিত সবাইকে তাদের জীবনসংগ্রামের গল্প শোনান।
রোববার সকালে তাদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়।
মেহেরুন ছাড়া জয়িতা সম্মাননা পাওয়া অন্য নারীরা হলেন সফল জননী বাড়বকুণ্ডের হাতিলোটার আয়েশা খাতুন, অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী বাড়বকুণ্ডের রহমতনগরের রুবি আক্তার, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় বারৈয়ারঢালার পশ্চিম লালানগরের সালেহা বেগম ও নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করায় সীতাকুণ্ডের ইদলপুরের হাসিনা বেগম।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় জয়িতাদের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন নাহার।
জান্নাতুল ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মিল্টন রায়। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, যুব কর্মকর্তা শাহ আলম, আরডিও মিতালী সেন, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সভাপতি এম সেকান্দর হোসাইন এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী আরতি ভৌমিক।