বর্তমান সময়ে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি হালখাতার জৌলুস অনেকটাই হারিয়ে গেছে বললেই চলে। আগের মতো জমজমাটভাবে আর পালিত হয় না এ হালখাতা উৎসব।
টালিখাতার বিক্রিও নেই আগের মতো। অ্যাপস আর সফটওয়্যারের প্রচলনে টালিখাতা এখন বিলুপ্তপ্রায়। তাছাড়া কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় টালিখাতার বিক্রিও নেমে এসেছে চার ভাগের এক ভাগে।
তবে এখনো হালখাতার উৎসবের দেখা মেলে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে। চট্টগ্রামের হাজারি গলি, খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলী ও আন্দরকিল্লার কিছু কিছু দোকানে বাংলা নববর্ষে পূজা-পার্বণ এবং ধর্মীয় রীতি ও আচার মেনে অনুষ্ঠিত হলো হালখাতা উৎসব।
পুরনো হিসেব চুকিয়ে, দেনাদারকে মিষ্টিমুখ করিয়ে, নতুন খাতা খুললেন পাওয়াদাররা। ব্যবসায়ীরা জানান শত বছরের ঐতিহ্য অনুযায়ী হালখাতার দিনে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পাওনা টাকা হাতে পান তারা।
ঢাক-কাসর বাজিয়ে ফুল-চন্দন-বেল পাতায় গণেশ পূজার মাধ্যমে হালখাতা উৎসবের শুভ সূচনা করেন এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা। হালখাতা অর্থাৎ নতুন খাতা খুলে পুরনো হিসেব চুকিয়ে দেন। দেনাদাররা আসলে তাদেরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে কিছু উপহারও দিয়ে দেন এই দিনে।
চট্টগ্রামের হাজারী গলির একাধিক জুয়েলারি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখের প্রথম দিনে দোকান সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। পুরনো খাতার বদলে দোকানে উঠেছে নতুন খাতা। নতুন করে নতুন বছরের হিসাব সাজানো হচ্ছে ওই খাতায়।
প্রথম দিনেই যেসব ক্রেতারা দোকানে প্রবেশ করছে তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করছে দোকানদার। যাবার সময় হাতে দেওয়া হচ্ছে ছোটখাটো কোন উপহার সামগ্রী।
হাজারী গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ী রাজীব চৌধুরী জানায়, এবার বৈশাখের দিনেই ঈদের ছুটি হওয়ায় হালখাতা উৎসবের বড় কোন আয়োজন নেই। তবে জৌলুস হারায়নি হালখাতা উৎসবের।
এখনো আমাদের নিয়মিত ক্রেতারা ঐতিহ্য ধরে রেখেই পুরনো হিসেব চুকিয়ে নতুন বছরে নতুন খাতায় লেনদেন করেন। আমরাও আমাদের ক্রেতাদের খুশী রাখতে উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকি।
কোরবানিগঞ্জের মনিকা জুয়েলার্সের কর্মচারী রঘুনাথ ঘোষ বলেন, এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণের দামও অনেক বেশি। দাম বেশি থাকায় স্বর্ণ এখন মানুষের নাগালের বাইরে।
ফলে এবার হালখাতা উৎসব পালন করছি না। তবে আজ পহেলা বৈশাখে যারাই দোকানে আসে সকলকে অ্যাপায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হালখাতা উপলক্ষে নিয়মিত ক্রেতাদের আমরা চাবির রিং, ঘড়ি, পার্স, ক্যালেন্ডার দিয়ে থাকি।
আন্দরকিল্লার এ প্রিন্টার্সের মালিক বাপ্পু বলেন, হালখাতায় ব্যবহৃত টালিখাতার বিক্রি অনেক কম। খাতার দাম অনেক বেশি। আগের চেয়ে প্রতি দিস্তার অফসেট টালিখাতার দাম এখন দ্বিগুনের বেশি। খাতা বিক্রি করে এখন লাভও কম। ফলে হালখাতার বেঁচা বিক্রি নেই বললেই চলে।
খাতুনগঞ্চের ব্যবসায়ী সজল সেন বলেন, পহেলা বৈশাখে আমরা হালখাতা অনুষ্ঠান করি। নতুন খাতায় নতুন বছরের হিসাব তুলি।
হালখাতার দিন সকালে গণেশ পূজার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয়। সারাদিন গ্রাহদের মিষ্টি মুখ করিয়ে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান শেষ হয়।
তবে বৈশাখ মাসব্যাপী আমাদের গ্রাহকরা আসেন তাদের পুরনো লেনদেনের হিসাব শেষ করতে। সারা বছর যারা বাকিতে কেনেন, তারা বৈশাখের প্রথম দিন প্রায় সব বকেয়া পরিশোধ করেন।
কিন্তু এবার ঈদের পরপর হওয়ায় গ্রাহকের সাড়া কম। সেজন্য হালখাতার আয়োজনও ছোট করে করেছি। মানুষের কাছে টাকা নেই। গত চার বছর ধরে বকেয়া তুলতে পারছি না। এ বছরও বকেয়ার খাতা ফাঁকা থেকে যাবে।
জেএন/পিআর