ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনি। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় এ নায়িকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলামের আদালতে এ আবেদন করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মোহাম্মদ সোহেল।
এ বিষয়ে আদেশ পরে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আদালত। বাদীপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম মোহাম্মদ সোহেল এ তথ্য জানান। এদিন এ মামলার প্রতিবেদন গ্রহণ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।
সম্প্রতি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
প্রতিবেদনে আসামি পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে আরেক আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে এ মামলার ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকি অমির সঙ্গে জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে মাঝে মধ্যে ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ হতো এবং একে অপরের বাসায় যাতায়াত ছিল।
২০২১ সালের ৮ জুন পরীমনির অনুরোধে অমিসহ তারা চারজন অমির কালো রঙের জিপ গাড়িতে করে রাত ১২টা ২২ মিনিটে ঢাকা বোট ক্লাবে আসেন। গাড়ির পেছনে পরীমনির সাদা রঙের খালি জিপ বোট ক্লাবে প্রবেশ করে।
ক্লাবের দোতলায় উঠে প্রথমে পরীমনি ও ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি বারের সামনে থাকা টয়লেট ব্যবহার শেষে বারের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং টিভির সামনের টেবিলে বসেন। টেবিলে সাক্ষী অমিও বসেন।
সৌজন্যতার খাতিরে অমি তাদেরকে স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার নিজ খরচে পরিবেশন করে আপ্যায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরীমনি একটি এক লিটারের ব্লু-লেবেল মদের বোতল অর্ডার করেন।
পরীমনি ও তার সঙ্গে থাকা জিম ও বনি নিমিষেই সেই অ্যালকোহল পান করে বোতল খালি করে ফেলেন এবং অনুরূপ আরেকটি বোতলের অর্ডার করেন। তারা ওই বোতলের আংশিক মদ পান করেন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
আড্ডার একপর্যায়ে তাদের ২/৩ টেবিল পেছনে বোট ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদকে আরও দুজন ব্যক্তির সঙ্গে বসা দেখতে পান অমি। তখন অমি পরীমনিকে নিয়ে নাসির উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং পুনরায় তাদের টেবিলে এসে বসে মদপানসহ গল্পগুজব করতে থাকেন।
কিছুক্ষণ পর ড্রিংকস শেষে পরীমনি ওয়েটারকে আরও এক লিটারের তিনটি ব্লু লেবেল মদের বোতলসহ দুই বোতল মদ পার্সেল দেওয়ার জন্য অর্ডার করেন। ওয়েটার তখন পরীমনিকে দুই বোতল মদ পার্সেল দিলেও ব্লু লেবেল মদের বোতল স্টকে না থাকায় পার্সেল দিতে পারেননি।
কিন্তু পরীমনি জোর করে ওই বোতল নিতে চান এবং টেবিলে হট্টগোল করতে থাকেন। তখন পরীমনি বনিকে থাপ্পড় মেরে বলেন, ‘আমাকে দেখে কি মাতাল মনে হয়?’
পরীমনির সঙ্গে থাকা জিম তাকে শান্ত করতে গেলে তাকেও পরীমনি থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পরীমনি খুবই উত্তেজিত হয়ে টেবিলের ওপর থাকা গ্লাস, অ্যাশ ট্রে, বোতল ফ্লোরে এদিক ওদিক ছুঁড়তে থাকেন। তখন নাসির উদ্দিন মাহমুদ ক্লাবের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পরীমনিকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এতে পরীমণি আরও ক্ষেপে গিয়ে একটি অ্যাশ ট্রে নিয়ে তার দিকে ছুঁড়ে মারেন, যা তার ডান কানের ওপরে মাথায় লাগে। তখন জিম তেড়ে এসে নাসিরকে গালমন্দ করতে করতে ২/৩ টা কিলঘুষি মারেন।
এরপর আবারও পরীমনি বারের ভেতরে যত্রতত্র গ্লাস ছুঁড়ে ভাঙচুর করতে থাকেন। একটি গ্লাস নাসিরের বুকে লাগলে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হন। তখন নাসির উদ্দিন মাহমুদ বোট ক্লাব ত্যাগ করে চলে যান।
মদের বিল না দিয়েই চলে যান পরীমনি
ক্লাবে তাদের খাওয়া দুই বোতল ব্লু লেবেলের দাম ও পার্সেলে নেওয়া দুই বোতল ওয়াইনের দাম পরিশোধ না করেই তারা ক্লাব থেকে চলে যান।
এই চারটি বোতলের দাম ৮৭ হাজার ৬৫০ টাকা। এ ছাড়া ক্লাবের বারের ভেতরে গ্লাস, অ্যাশ ট্রে, বোতল ভাঙচুর করায় আনুমানিক ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন বলেন, “মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে সচেতনতার সঙ্গে কাজ করেছি।
বাদীর অভিযোগের বিষয়ে নিবিড় তদন্ত করে এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি। ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী আছে, মেডিক্যাল রিপোর্ট আছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
২০২১ সালের ৬ জুলাই ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন।
এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন- পরীমনির সহযোগী ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিম।
জেএন/পিআর