ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার আগেই জমে উঠেছে মেলা

অনলাইন ডেস্ক

চট্টগ্রামে শতবর্ষ ধরে চলমান ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদীঘির মাঠ ঘিরে জমে উঠতে শুরু করেছে তিন দিনের বৈশাখী মেলা

- Advertisement -

আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক জব্বারের বলি খেলা। এদিকে মেলা শুরুর আগেই ভিড় বাড়ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।

- Advertisement -google news follower

সোমবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, লালদীঘির পেট্রল পাম্প, জেলা পরিষদ মার্কেট চত্বর, সিনেমা প্যালেস থেকে হাজারী গলির মুখ পর্যন্ত মাটির তৈজসপত্র, শোপিস, ফুলদানি, হাতি-ঘোড়া, মাটির ব্যাংকের বড় বড় স্তূপ। রং করার কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা।

প্রচণ্ড গরমের কারণে মাটির তৈরি পানির পাত্র, কলসি, জগ, গ্লাসের চাহিদা বেশি। চাহিদা রয়েছে মাটির ব্যাংক, পুতুল, দেবতার মূর্তি ও শোপিসের।

- Advertisement -islamibank

রবিবার রাত থেকেই চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠের আশপাশের সড়ক ও ফুটপাতের খালি জায়গায় বসা শুরু করেছেন বিক্রেতারা।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র থেকে শুরু করে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন এসব ক্রেতা।

মাটির পণ্য, বেতের ফুল-ফুলের টব, ফুলদানি, ঘর সাজানোর শোপিস, শিশুদের খেলনা, পাটের পণ্য, তাতের পণ্য, পাপস, হাঁড়ি-পাতিল, দা-ছুরি, ঝাড়ু, দোলনাসহ সব রকম দেশীয় পণ্যের ছোট-বড় মিলে প্রায় দুই শতাধিক স্টল সাজতে শুরু করেছে মেলায়। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্টল সাজাতে ব্যস্ত এখন।

গতকাল সোমবার বিকেলে লালদিঘির ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার ১১৫তম পর্ব শুরুর আগে দৃশ্য এটি। এরমধ্যে মেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীরা চলে এসেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। নিচ্ছেন তিন দিনের মেলার প্রস্তুতি।

ক্রেতা নাজমা খাতুন বলেন, দুপুরে মানুষ একটু কম থাকে। কিন্তু রোদের কারনে আসলে বেশি ঘুরাঘুরি করতে ইচ্ছে করে না। ঘর সাজানোর ফুলের জন্য এসেছি।

মেলার তিনদিন খুব ভিড় হবে ভেবেই আগে আগে এসেছি। তিনপিস সূর্যমুখী ফুল কিনেছি। আরো কিছু নিব। মাটির পণ্যও কিছু কিনবো।

এদিকে কক্সবাজার থেকে এসেছেন মো. আকমল আলী। ২০ বছরের বেশি সময় তিনিও এ মেলায় অংশগ্রহণ করছেন। নানা রঙের হাত পাখা, ডালা, কুলা, ঝুঁড়ি, নিয়ে আসেন তিনি।

এসময় তিনি বলেন, আসছি পর্যন্ত বেশি বিক্রি হচ্ছে হাত পাখা। আমাদের কাছে চার রকমের হাত পাখা আছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে তালপাতার হাত পাখাটি।

বাঁশের হাত পাখা প্রতি পিস ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা, তালপাতার ১৫০ টাকা, কাপড়েরটা ৮০ থেকে ১শ’ টাকায় এবং প্লাস্টিকের কাগজের হাতপাখা বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১২০ টাকায়।

এছাড়া কুলা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে ৪শ’ টাকায়। বাঁশের টুকরি বিক্রি হচ্ছে ৮০- ৩শ’ টাকায়, খাঁছি ৮০ থেকে ২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়া থেকে এসেছেন প্রায় ৭০ বছর বয়সী মো. মনছুর। তিনি বলেন, টানা ৪০ বছর এ মেলায় অংশগ্রহণ করছি। কখনো কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে কখনো খুব ভালো, কখনো মোটামুটি ব্যবসা করেছি।

বাহারি এ মাটির পণ্য নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, ফুলদানি, ফুলের টব, ঘর সাজানোর শোপিসের স্টলগুলোর সামনে।

ফরিদপুর থেকে মাটির তৈরি মৃৎশিল্প নিয়ে মেলায় এসেছেন মো. ফারুক। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে আমি জব্বারে বলীখেলা উপলক্ষে এ মেলায় আসছি। এবারও ঘর সাজানোর নানান মৃৎশিল্প নিয়ে এসেছি। ক্রেতাদের অপেক্ষায় আছি।

খাগড়াছড়ি থেকে আসা ফুলের ঝাড়ু বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন জানান, ট্রাকে করে লক্ষাধিক টাকার ফুলঝাড়ু নিয়ে দুদিন আগে মেলায় এসেছি। এবার ভালো স্থান পেয়েছি। এখন থেকে বিকিকিনিও হচ্ছে। মেলা শুরু হলে বিক্রি আরও বাড়বে।

গৃহস্থালি পণ্যের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও এ মেলায় অন্যরকম আকর্ষণ রয়েছে। সিলেট থেকে ছোটদের বিভিন্ন খেলনা নিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ জহির মিয়া।

তিনি জানান, প্রতিবছর তারা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকেন এ মেলার জন্য। শিশুদের বিভিন্ন খেলনা ভালো বিক্রি হয়। তাই আগে থেকে চট্টগ্রামে চলে আসছেন তিনি।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বলীখেলাকে (কুস্তি প্রতিযোগিতা) ঘিরে তিন দিনের বৈশাখী মেলা বসে।

ওই তিন দিন কোতোয়ালী, সিনেমাপ্যালেস ও আন্দরকিল্লা পর্যন্ত সড়কের ওপর পসরা সাজায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তা, বেপারী, দোকানিরা।

এরপরও অলিগলিতে চলে মেলার পসরা বিক্রি যতদিন না মজুদ শেষ হয়। সবমিলে কেনাবেচা হয় কয়েক কোটি টাকার।

জেএন/হিমেল/পিআর

KSRM
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জয়নিউজবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন news@joynewsbd.com ঠিকানায়।

এই বিভাগের আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ

×KSRM