ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দশ লেনে উন্নিতকরণে সরকারের প্রস্তাবিত প্রকল্পের তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার, শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দারা।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সীতাকুণ্ডের জনগণের পক্ষ থেকে এসব কথা তুলে ধরা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড নাগরিক সমাজের আহব্বায়ক ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাশেম, বিজয় স্মরণী কলেজের প্রাক্তণ অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম, নাগরিক সমাজের সমন্বয়ক লায়ন মো. গিয়াস উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব মাষ্টার আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নিত করার কাজ শেষ হয়। নতুন করে দশ লেইন করা হলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, হাট-বাজার, বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানসহ শত শত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসকি ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা চিরতরে হারিয়ে যাবে। এছাড়াও জমি অধিগ্রহণের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে হাজার হাজার বিরল প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা দেশের ইকোনমিক লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দশ লেন করার বিপক্ষে নই। কারণ এটির সঙ্গে দেশের অগ্রগতি ও উন্নতি জড়িত। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সীতাকুণ্ডের ৫ লাখ মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সীতাকুণ্ড অংশ দশ লেন করার ব্যাপারে বিকল্প প্রস্তাব বিবেচনার দাবি করছেন। কারণ এটির সাথে দেশের অগ্রগতি উন্নতি জড়িত। কিন্তু পূর্বে পাহাড়, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল বেষ্টিত উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত সীতাকুণ্ড উপজেলার আয়তন প্রায় ৪৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ছলিমপুর ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কোন কোন এলাকার ব্যস সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে পাহাড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটারেরও কম।
তিনি বলেন, সমুদ্র ভাঙনের ফলে সীতাকুণ্ড উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষ হাজার হাজার একর কৃষি জমি ও বসতভিটা হারিয়েছে। দশ লেইন করা হলে সীতাকুণ্ডে শতশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন থাকবে না তেমনি পূর্ব থেকে পশ্চিম ও পশ্চিম থেকে পূর্ব কোন যোগাযোগ থাকবে না। বর্তমানে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং ইকোনোমিক জোন থেকে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর উপকূল পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও বাকি আছে ফৌজদারহাট থেকে সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এলাকা। এই মেরিন ড্রাইভ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কমবে সড়ক দুর্ঘটনা, সেইসাথে জনদূর্ভোগ কমে নির্বিঘ্নে চলাচল করবে যানবাহন। দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব হচ্ছে বিদ্যমান চার লেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের সিটি গেইট থেকে বড় দারোগারহাট পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। এটি করতে দশ লেনের চেয়ে কম খরচ হবে বলে সড়ক নির্মাণ বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ, মানুষের জমি ও বড় বড় স্থাপনা অধিগ্রহণের পেছনে ব্যয় হবেনা। সেই অর্থ বাঁচবে। তাছাড়া সার্ভিস লেইন বা আন্ডারপাস ছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আট-দশ লেইনের মহাসড়ক করার কোন নজির বিশ্বে নেই। তৃতীয় প্রস্তাব হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে রেললাইনের পূর্বে ফৌজদারহাট থেকে চিনকী আস্তানা পর্যন্ত পাহাড়ের পাশ দিয়ে মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে। এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দুষ্টি আকর্ষণ করছে সীতাকুণ্ডবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড সমিতি-চট্টগ্রাম এর সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন মানিক, এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার আবুল হাসনাত, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফোরকান আবু, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শিল্পী, কামরুল ইসলাম দুলু, সমাজ সেবক ননী গোপাল দেবনাথ, এড. জহির উদ্দিন মাহমুদ, আবুল খায়ের মো. ওয়াহিদী, ফারুক মোনাদিন, তুষার কান্তি চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আলমগীর, শিমুল চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনেরা।
জেএন/এমআর