বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে আজ বৃহস্পতিবারও (২৫ এপ্রিল) উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের জেরে বিকেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বেলা দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত একাডেমিক কাউন্সিলের ১৫১তম জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে ছাত্রদের এবং আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীদের হল ছাড়তে হবে।
এদিকে হল ছাড়ার নির্দেশনা পেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বরে থাকা ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহনের দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। তারা প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দিয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
উপ-উপাচার্য জামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। আমরা ভেতরে আছি। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। যেহেতু ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আলোচনার আর পরিবেশ নেই।’
নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এর আগে চুয়েটের ১২টি বিভাগের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। সকাল ১০টার দিকে কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে চতুর্থ দিনের মতো অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
বিকেল পৌনে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা হল ছাড়বেন না। দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা আবারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছিলেন। এসব দাবির বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেসবের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা একমত হননি। তাই আন্দোলন চলছে। কিন্তু প্রশাসন আলোচনায় না বসে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
চুয়েট রেজিস্ট্রার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা সাড়া দেননি। তাই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হল না ছাড়লে কী হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’
গত সোমবার বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বাসের ধাক্কায় নিহত হন পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা (২২) ও দ্বিতীয় বর্ষের তৌফিক হোসাইন (২১)। আহত হন জাকারিয়া হিমু (২১)। দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রথম দফায় সড়ক অবরোধ করে তারা।
জেএন/এমআর
