চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকায় উড্ডয়নের পর বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর ইয়াক-১৩০ (YAK 130) প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানের পাইলট অসীম জাওয়াদ মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর সাড় ১২টার দিকে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ (নেভি হাসপাতাল) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা পাইলটের মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।
বিমানে থাকা দুজন পাইলট প্যারাশুট দিয়ে নেমে যান। তাদেরকে উদ্ধার করে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার সময় পাইলট অসীম জাওয়াদ মারা যায়।
তিনি বলেন একই হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে বিধ্বস্ত বিমানের কো-পাইলট উইং কমান্ডার সোহাম।
স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৭ সালে এস.এস.সি ও ২০০৯ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন।
২০১০ সালে (বাফা–বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমি)’তে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে একজন পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
অসীম জাওয়াদ PT-6 , L-39ZA , F-7MB, F-BG1 ইত্যাদি বিমান চালিয়েছেন। তিনি ছিলেন F-7MG1 এর অপারেশনাল পাইলট ও এলিমেন্ট লিডার।
তিনি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ” জাতিসংঘের মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন কোর্সের তাগিদে ভ্রমণ করেছেন চীন, ভারত, তুরস্ক ও পাকিস্তানে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিয়োজিত ছিলেন ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর’স স্কুল অফ বি.এ.এফ-এ স্টাফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে।
অসিম জাওয়াদ নিজের ট্রেনিং জীবনে সকল বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন গৌরবমণ্ডিত “সোর্ড অফ অনার”। এস.সি.পি.এস.সি-থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র “সোর্ড অফ অনার” বিজয়ী।
“ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টরস” কোর্সে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন “মফিজ ট্রফি”। এছাড়া তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য চিফ অফ এয়ার স্টাফ থেকে প্রশংসা পেয়েছেন।
দুই বছরের এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জনক জাওয়াদের বিদায়ে বিমানবাহিনীর পাশাপাশি সেনা ও নৌ বাহিনীর সহকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
এর আগে আইএসপিআর থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ (YAK 130) প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
এ ঘটনায় আহত দুই পাইলটকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নৌ-বাহিনী ও পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তারা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরে এটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। একপর্যায়ে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এসময় বিমানে থাকা দুজন পাইলট প্যারাশুট দিয়ে নেমে যান। একপর্যায়ে বিমানটি কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই সার্জেন্ট জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির অবস্থান। দুর্ঘটনা কবলিত বিমানটি সেখান থেকে উড়াল দিয়েছিল বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম বিমানবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, বিমানটি রানওয়ের বাইরে বিধ্বস্ত হয়েছে।
এ কারণে বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠা-নামার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
জেএন/পিআর