অবশেষে স্বজনদের মাঝে ফিরেছেন সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরে নামার পর সেখানে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। দুই মাসেরও বেশি সময় পর স্বজনরা নাবিকদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ খুশি কাঁদতে থাকেন।
এনসিটি-১ নম্বর জেটিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের জন্য এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। সেখানে তাদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কেএসআরএমের পক্ষ থেকে নাবিকদের বরণ করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাহাজের চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘বীভৎস সেই দিন থেকে আলোর দিনে ফিরেছি। দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা আর মনে করতে চাই না। আমরা ট্রমা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আপনারা দোয়া করবেন। দুই সন্তানকে কাছে পেলাম। বাসায় আরেক সন্তান কান্না করছে। তার কাছে ফিরতে হবে দ্রুত।’
এমভি আব্দুল্লাহর ক্যাপ্টেন আব্দুর রশীদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘২৩ জন নাবিককে আগলে রেখেছিলাম। বিভীষিকার পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হবো বিশ্বাস ছিল। কিন্তু একটা জাহাজ গেলে তার লোকসান হয়তে মানা যায় কিন্তু একটা প্রাণ গেলে ফেরানো যাবে না কোনোভাবেই। তাই সবসময় ক্রুদের দস্যুদের থেকে নিরাপদে আগলে রাখার কথা ভাবতাম।’
জিম্মি দশা থেকে মুক্ত আরেকজন নাবিক বলছিলেন, ‘এই দিনটার জন্য অনেক অপেক্ষা করছিলাম। ফিরতে পারবো কি না পরিবারের কাছে এ শঙ্কায়ও ছিলাম। অবশেষে দেশে ফিরলাম। দূর থেকে দেখছি আমার পরিবারের সদস্যদের। মনে হচ্ছে আমারও নতুন জন্ম হয়েছে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উপস্থিত হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দরের পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সচিব ওমর ফারুক।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টামিনাল-১ (এনসিটি) জেটিতে পৌঁছে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন তারা। এনসিটি জেটিতে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন নাবিকদের অনেক স্বজন, জাহাজের মালিক পক্ষসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
জেটিতে নাবিকরা নামার পর স্বজনরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। এ সময় কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। বন্দরের এনসিটি এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মুহূর্তে যেন নিস্তব্ধতা নেমে আসে কর্মচঞ্চল জেটিতে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা ১২টার দিকে কুতুবদিয়ায় ৫৬ হাজার মেট্টিকটন চুনাপাথর বহন করা জাহাজটি নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। এরপর নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দর জেটির উদ্দেশে কুতুবদিয়া থেকে রওনা হন। জাহাজটি থেকে বর্তমানে চুনাপাথর খালাস করা হচ্ছে।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এই জাহাজ ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরা। মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। সেই হিসেবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছায়।
জেএন/এমআর