ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার সরকারকে জানিয়ে ভারতে যাননি বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমাদের এমপিকে যারা হত্যা করেছে, তারা আমাদের দেশরই লোক। যারা খুন করেছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার কাজ চলছে। এমপি আনার সরকারকে জানিয়ে ভারতে যাননি। আনারের ভারত গমন ও নিখোঁজ সবকিছু নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
বুধবার (২২ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ শিরোনামে সভা শেষে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কলকাতার নিউটাউনে আমাদের একজন এমপি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন। দুই তিন দিন ধরে তাকে নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। তার পরিবারসহ কেউ জানে না। চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে গেছেন। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমাদের একজন এমপি যখন চিকিৎসার জন্য যান, তিনি কিন্তু ভারত সরকারকে জানিয়ে যান না। সেখানকার যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে গেলে নিরাপত্তার ব্যাপারটি তখনই দেখা হয়। তার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।
এসময় এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বন্ধুরাষ্ট্র ভারতকে নিয়ে যা বলছেন তা সমীচীন নয়, তাদের নেতা সালাউদ্দিন তো দিনের পর দিন ভারতে ছিলেন, তিনি তো খুন হননি। আনারকে হত্যায় জড়িত বাংলাদেশিরাই।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, তাকে (আনোয়ারুল আজীম) যারা হত্যা করেছে, যে ফ্ল্যাটটিতে, সেটা বাংলাদেশের কেউ ভিন্ন নামে ক্রয় করেছে। ওখানে যারা হত্যা করেছে পাঁচ থেকে ছয়জনের মতো, এর মধ্যে পাঁচজনই বাংলাদেশের। এই ব্যাপারটা নিয়ে ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’- এই ধরনের উক্তি করা সমীচীন না।
কাদের বলেন, নারী ও তরুণরা আওয়ামী লীগ থেকে দীর্ঘদিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। শেখ হাসিনার ম্যাজিক লিডারশিপের জন্য আজকে তরুণরা সুদূর সুনামগঞ্জ থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত আজকে নারীরা তরুণরা একবাক্যে আওয়ামী লীগকে নৌকাকে ভোট দেবেন বিবর্তনের এই ধারাটি আমরা লক্ষ্য করেছি।
বিশ্ব রাজনীতির সঙ্কটের ফলে অর্থনীতিতে অভিঘাত এসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমসাময়িক রাজনীতির এখন অনেক কিছু শুভকর নয়। বিশ্ব রাজনীতি সংকটের ঘূর্ণাবর্তে আবর্তিত হচ্ছে। আজকে বিশ্ব সংকটের প্রতিক্রিয়া প্রভার আমাদের অর্থনীতিতে অভিঘাত এসেছে যার ফলে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি। আমাদের রিজার্ভ ৪৮ থেকে অনেকটা নিচে নেমে এসেছে। রেমিট্যান্স রফতানি, রফতানি আয় ডলারের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে যার ফলে জিনিসপত্রর দাম বেড়েছে। বেশি দামে আমদানি করলে অল্প দামে বিক্রি করে সেখানে মাঝখানে আরেকটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়।
কাদের বলেন, যারা সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষকে নির্বিচারে নিষ্ঠুরভাবে বোমা মেরে গুলি করে অবিরাম ঘোষণা দিয়ে হত্যা করেছে যেটা গাজার যে গণহত্যা..দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার হলকাস্টে ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছিল বলে ইতিহাসে আছে। এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী যা করছে সেটা হিটলারের চেয়েও ভয়াবহ। কিভাবে শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করছে। এটা কি গণহত্যা নয়? আর সেখানে সিস ফায়ারের জন্য জাতিসংঘে অ্যাবসেটন্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র বাকিরা ভোট দেওয়ার পরেও ইসরায়েল তোয়াক্কা করেনা। জাতিসংঘের নিয়ম তারা মানেনা অবজ্ঞা করেছে উপেক্ষা করেছে মানেনি।
আওয়ামী লীগ মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক যুদ্ধের বিপক্ষে প্রতিরোধ করায় নির্বিচারে সেখানে মানবাধিকার পদদলিত করেছে। মেয়েদের পেছনের দিকে রশি দিয়ে হাত বেধে টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তুলেছে। এখন সেটাকে যারা গণতন্ত্র বলতে চাই এনটোনি ব্লিনকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিল আমেরিকাতে শিক্ষার্থীর উপর হামলা কেন হচ্ছে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘দিজ ইজ অ্যা পার্ট অফ ডেমোক্রেসি।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা এভাবে প্রতিবাদকারীদের হামলা করে তাদের গণতন্ত্র মানবাধিকার কি লঙ্ঘন হয়না? যারা গণহত্যাকে অস্বীকার তারা আমাদের কিসে নিষেধাজ্ঞা দিলো, ভিসানীতি প্রয়োগ করলো সেটা নিয়ে তাতে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই পরিষ্কার বলতে চাই।
সেনাবাহিনী নিজস্ব নিয়মে চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের আলাদা নিয়ম কানুন আছে তারা সেভাবে চলে। সেখানে কেউ কোন অপরাধ করে থাকে সেটা প্রমাণিত হলে সেটা ছাড় দেয়ার লোক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ডোনাল্ড ল্যু এসে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা বলে যেতে না যেতেই নিষেধাজ্ঞা এসে গেল। আগে সাতজন, এখন একজন। গাজায় এই নিষ্ঠুর বর্বরোচিত ভূমিকাকে যারা গণহত্যা বলতে চায়না, তারা কোথায় কাকে নিষেধাজ্ঞা দিলো সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মঞ্চ সারথি আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটি আওয়ামী লীগ। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য নায়ক ফেরদৌস, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আনিসুর রহমান।
জেএন/এমআর